মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া: মা মাগো ফিরে এসো। আমাদের ছেড়ে থাকতে তোমার কি একটুও মায়া লাগেনা। আমাদের কথা কি তোমার একটিবারও মনে পরে না।
মা দেখে যাও তুমিহীন ছোট ভাইটি এক লোকমা ভাতও খেতে চায় না। ঘরের যে দিকেই তাকাই কেবল তোমাকেই দেখতে পাই।
কথা গুলো এমনি ভাবে ঘুচিয়ে বলতে না পারলেও কথা গুলো এমনই ছিলো। মাকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে অশ্রু ভেজা নয়নে বৃষ্টি (১০) গগনফাটা আর্তনাত করছিলো।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খেজুরবাড়ি গ্রামে বৃষ্টিদের বাড়ি। পিতা মো. শাহ আলম হাওলাদার বানারীপাড়া পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের মরহুম আব্দুল মতিন মৃধার লিভার ব্রাদার্সের ডিলারশিপে শ্রমিকের কাজ করতেন।
তারা ডিলারশিপ ছেড়ে দেয়ার পরে কিছুদিন কর্মহীন থাকতে হয় শাহ আলমকে। দুটি সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে বড়ই বিপাকে পড়তে হয় তাকে। এররপরে কয়েকদিন রাজ মিস্ত্রীর কাজ করেণ সে। তবে একদিন কাজ হলে অন্যদিন হতোনা।
সন্তানদের লেখাপড়াও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এরইমধ্যে স্বামী-স্ত্রী ঠিক করেণ তারা ঢাকা যেয়ে দু’জনেই কোন কারখানায় কাজ করবেন। যে কথা সেই কাজ ২০২০ সালের প্রথম দিকে তারা রাজধানীতে যায় কাজের সন্দানে। প্রথমে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার গার্মেন্টসে চাকরি নেয়।
কিছুদিন কাজ করার পরে তার চলন-বলন বদলাতে থাকে। স্বামী ও সন্তানেদের ওপরে তার তেমন কোন আগ্রহ দেখতে পায় না শাহ আলম। দিনের পর দিন আচরণ ও পোষাকের ধরণ উচ্চবিলাসী হতে থাকে।
তখন স্বামী শাহ আলম ঠিক করেণ তিনিও কাজে যোগ দিবেন। তবে তার আর কাজে যোগ দেয়া হলোনা। একদিন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার কাজে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি।
ওইদিন বিকেল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল স্ত্রীর কোন সন্তান করতে পারলো না স্বামী শাহ আরম। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পরে ঢাকার বাসা ছেড়ে বড় মেয়ে বৃষ্টি ও একমাত্র ছেলে সিফাত (৭) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে শাহ আলম হাওলাদার।
যেদিন বৃষ্টি ও সিফাতের মা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন সেই থেকে বর্তমানে প্রায় ১ বছর পেড়িয়ে গেলেও স্বামী ও সন্তানদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি ফাতেমা আক্তার (২৭)।
বৃষ্টি ও সিফাতের নানা শাহজাহান ফকিরের বাড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের উত্তরকুল (বাংলাবাজার) গ্রামে।
সেখানে দু’ভাই বোন প্রায়ই বেড়াতে যায় মায়ের গদ্ধ নানা-নানুর কাছ থেকে পাওয়ার আশায়। তবে তাদের মা তার পিতা-মাতার (নানা-নানুর) সাথে কথা বললেও একটি বারের জন্যও নারীছেড়া সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করেণা বলে জানায় হতভাগী বৃষ্টি।
তবুও নানুর কানের সাথে কান লাগিয়ে মায়ের কথা শুনে অশ্রুশিক্ত নয়নে যেন, মনের শান্তনা খুঁজে পায় দুটি ভাই-বোন।
যে বয়সে মায়ের আদর পেয়ে বেড়ে ওঠার কথা সে বয়সে অবুঝ দুটি ভাই-বোন অসহায় দৃষ্টিতে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে এই বুজি মা এসে ডাক দিলো, বৃষ্টি-সিফাত কোথায় তোরা আয় বুকে আয়।
পথের ক্লান্তি ভুলে ¯েœহ ভরা কোলে আজও তাদের মা শীতল করলোনা দুটি অবুঝ হৃদয়। সন্তান দুটির মুখপানে তাকালে যেন, মনে হয় পৃথিবীর সব দুঃখ কষ্ট ওদেরকে গ্রাস করে আছে।