কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ধরলা নদীর ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের ৩২০কোটি টাকার টেন্ডারে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে বলেছিলেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ।
কিন্তু বিধিসম্মত না হওয়ায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী তাতে রাজী হননি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ করেন এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ।
এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে পনের দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তদন্ত শুরুর আগেই কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামকে বদলীর নির্দেশ দেয়া হয়।
এনিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় জনমনে।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর ডানতীর প্রকল্পে ৫৯৫কোটি টাকা একনেকে প্রকল্পের ৪০টি গ্রুপে প্রায় ৩২০কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন হয়।
এই টেন্ডারে ৪০টি গ্রুপের মধ্যে ২০টি গ্রুপের কাজই চেয়েছেন স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ ।
চাহিদা মোতাবেক কাজ না পেয়ে মরিয়া হয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ্য, বিএনপি জামাত পৃষ্ঠপোষক গোলাম রব্বানী নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০কোটি টাকার কাজ দেয়া হয়েছে।
অথচ ওই ঠিকাদার পাবনা-২ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। গোলাম রব্বানীর নামে মাত্র ৩৯কোটি টাকার কাজের কাার্যাদেশ রয়েছে।
স্থানীয় এমপি ধরলা নদীর বাম ও ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে ডিও লেটার এর প্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নং ৪২,০০,০০০০, ০৩৫, ৯৯, ০০৩১৯৯/৪১ স্বারকে উপ-সচিব উন্নয়ন-২ অধিশাখা মাহমুদ মাহমুদ হাসানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে আগামী পনের কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর দাখিলের নির্দেশ দেয়।
কিন্তু তদন্ত শুরু না হতেই শুধুমাত্র অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামকে মঙ্গলবার পাউবোর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ২) প্রদীপ কুমার বসাক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বদলি করা হয়।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান সাজু জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান নিবার্হী প্রকৌশলী অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও দক্ষ একজন প্রকৌশলী।
তার ঐকান্তিক চেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের তীররক্ষা প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এমপি পনির উদ্দিন কাজ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছেন। যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দরপত্রে কোনরকম অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ ৪০টি গ্রুপের দরপত্রের সিংহভাগই তার মনোনীত ঠিকাদারদের দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
নিয়ম মেনে কাজ বিতরণ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে মনগড়া অভিযোগ দেন। তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বৃস্পতিবার দিনব্যাপী তদন্ত করেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোড অফিস, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও তদন্তের কারণে কোন কথা বিস্তারিত বলতে রাজি হয় না হলেও স্থানীয় এমপির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করার কথা স্বীকার করেন। প্রতিবেদন জমা হলে আশা করি কুড়িগ্রাম বাসীর চাওয়া পুরন হবে।