নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মূল ভবনের প্রশাসনিক শাখা ও ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সংযোগের দুপাশের ফাঁকা জায়গা। আগে সেখানে ময়লা ফেলে রাখত সবাই।
ওইটুকু রাস্তায় দুর্গন্ধে হেঁটে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠত। প্রশাসনিক শাখা থেকে বেরিয়ে রোগী দেখতে ওয়ার্ডের দিকে যেতে বাঁধত বিপত্তি। নাকে রুমাল চেপে কত আর রাস্তা পার হওয়া যায়।
কিন্তু দিনে বেশ কয়েকবার রোগীর আত্মীয়সহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট মানুষদের এ রাস্তা ধরেই কাজ করে যেতে হতো। বর্তমানে সেখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুলের গাছ।
দুর্গন্ধকে হটিয়ে এখন সেখান থেকে ভেসে আসে ফুলের সুবাস। পাশাপাশি রয়েছে ভেষজ গাছ। সন্ধ্যার পরে বারান্দা দিয়ে হাঁটলে নাকে ভেসে আসে হাসনাহেনা ফুলের সুবাস।
রাতে হাসপাতালের সামনে প্রতিটি কোণায় কোণায় জ্বলে নিয়নের বাতি। মনেই হবে না এটি একটি সরকারি হাসপাতাল।
আশির দশকে নির্মিত আধুনিক হাসপাতালই এখন ১০০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল। পাশেই নির্মিত হচ্ছে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন।
এ ছাড়াও হাসপাতালে সিসি ক্যামেরার আওতায় নেওয়ায় বিভিন্ন ল্যাবের দালালদের তৎপরতা লাঘব হয়েছে।জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকদের রোগী দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ড ও বাথরুমগুলো।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীদের প্রশংসায় ভাসছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।সরেজমিন দেখা গেছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা দালালের উৎপাত আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। মূল ফটকে নেই হকার ও দোকানপাট।
টিকেট নেওয়া, টাকা জমা দেওয়া, ওষুধ বিতরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, জরুরি বিভাগ বা বহির্বিভাগে রোগী দেখানো সব জায়গাতেই শৃঙ্খলা দৃশ্যমান।
মূল গেট দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য একটি ফ্রন্টডেস্ক। সেখান থেকেই সেবা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পাবে সবাই।
প্রথম ও দ্বিতীয় তলার প্রতিটি ওয়ার্ড, বারান্দা, বাথরুম পরিষ্কার রাখার জন্য কাজ করছে ৭-৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। রোগীদের সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়।
বহির্বিভাগে ল্যাব ও চিকিৎসক কক্ষের সামনে দেওয়া হয়েছে একাধিক বেঞ্চ ও সিলিং ফ্যান। এ আমূল পরিবর্তনে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের স্বস্তি মিলেছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে রোগীর কমতি নেই। কিন্তু দরিদ্র মানুষের আক্ষেপ, তারা ওসব জায়গায় যেতে পারেন না।
সেই আক্ষেপ দূর করার চেষ্টায় এ পরিবেশ তৈরির পেছনে কাজ করেছে। যাতে যেকোনো মানুষ এখানে এসে বলবে, বেসরকারিতে না গিয়ে ভুল করিনি।
তিনি আরও জানান, ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা রয়েছে। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হাসপাতাল পরিচালনার ব্যাপারে আন্তরিক।
সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সব ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়াসহ হাসপাতালের সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য তদারকি রয়েছে।
ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি তা রক্ষা করে বহাল রাখাই আমার প্রধান লক্ষ্য। সেই মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।
চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে সময়মতো হাসপাতালে আসেন এবং সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
হাসপাতালে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বা অনিয়মের কোনো অভিযোগ পেলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তা এ চিকিৎসক আরও জানান, গাইনি ওয়ার্ডে নারীরা তাদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন।
বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সেই প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলে। ফলে তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়।
কোম্পানির প্রতিনিধিদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছি। সেই সময়ের মধ্যে তারা ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করবেন।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাকে আরও উন্নত করার জন্য আমি চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।