জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: আমতলীর পায়রা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। সারা দিন জাল পেতেও মাছ পাচ্ছে না জেলেরা।
দিন শেষে নিরাশ হয়ে খালি হাতে ফিরছে তারা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেলেরা। নদীতে মাছ না পরায় ঘাটে বেধে আছে অনেক ট্রলার। তারা মাছ পরার অপেক্ষায় অছেন।
জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ১৩ হাজার ৫শ’ ৩১ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ৬হাজার ৭শ’ ৮৫জন এবং তালতলী উপজেলায় ৬ হাজার ৭শ’ ৪৬ জন। এর মধ্যে দুই উপজেলায় ১১ হাজার ৯শ’ ৮৫ জন জেলে ইলিশ শিকারে নিয়োজিত।
১জুন থেকে ২৩ জুলাই টানা ৬৫ দিন অবরোধ শেষে নদীতে ইলিশ শিকারে নামে জেলেরা। মাছ শিকারে নেমেই মাছ না পেয়ে হোচট খান তারা।
নদীতে সারা দিন জাল পেতেও ৪-৫টি ছোট আকৃতির ইলিশ ছাড়া আর কিছুই মিলছে না তাদের জালে।
সারা দিনের ট্্রলারের তেল ও খাওয়া খরচও উঠছে না মাছ বিক্রি করে। এমনিতেই ৬৫ দিনের অবরোধে কাহিল জেলেরা।
তারপরও এখন জালে ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পরছেন তারা। নিরুপায় হয়ে অনেক ট্রলার ঘাটে বেঁধে আছে মাছ পরার অপেক্ষায়।
ফকির হাটের জেলে রিয়াজ মুছল্লী, সিদ্কি কবিরাজ আক্ষেপ করে বলেন, মোগো গরীবের অইছে যত মরন দশা। ইলিশ মাছ ধইর্যা খামু হেও নদীতে মাছ নাই।
ইলিশ ধরা জেলে ইসমাইল হোসেন, ৬৫ দিন মাছ ধরি নাই। মোলা মাইয়া লইয়া কোন রহম বাইচ্যা আছি।
হেইয়ার পর এহন মাছ ধরতে নাইম্যা হারা দিন খালে জাল হালাইয়া ইলিশ মাছ পাই না। মাছ না পাইলে মোরা কি খাইয়া বাছমু।
তেতুল বাড়িয়া জেলে, আকবর আলী বলেন, খারে দিন রাইত ঘুইর্যা ২-৪ডা ইলিশ পাই হেইয়া বেইচ্যা ভাগে যা পাই খালি চাউলের দামও অয় না। তিনি আরো বলেন, মাছ না পাইয়া এহানে এহন অনেক ট্রলার ঘাপে বাইন্দা রাখছে। হ্যারা মাছ ধরতে যায় না।
লোচা গ্রামের জেলে, বেল্লাল হাওলাদার, ফারুক গাজী, টুলু শরীফ বলেন, ব্যাইন্যা রাইত অইতে সন্ধ্যা তামাইত খালে জাল লইয়া থাহি এর মধ্যেও কোন মাছের দেহা পাই না।
লাল মিয়া ও চান মিয়া জানান, ইলশা মাছের আশায় হারাদিন জাল হালাইয়াও কোন মাছ পাই না। পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু এহন হেই চিন্তায় আছি।
বৃহস্পতিবার সকালে আমতলী মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তেমন একটা ইলিশ নেই। ছোট আকারের কিছু ইলিশ থাকলেও তার দাম আকাশ ছোয়া।
মাছ বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন জানান, খালে ইলিশ না থাকায় মাছের দাম অনেক বেশী। আরেক মাছ বিক্রেতা মো. আলম বলেন, এক কেজি সাইজের ইলিশ ১হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছোট ঝাটকা সাইজের ইলিশ ৫-৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কজি ওজনের উপরে দের হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান,পায়রা নদীতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে ¯্রােত কমে জাওয়ায় ইলিশ আসে না। তার পরও রয়েছে পায়রা নদীর সাগর মোহনায় অসংখ্য ডুবো চর। চরের কারনেও মাছ আসছে না।
আমতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সর্ধার জানান, বলেন ইলিশ মাছ হচ্ছে অভিযাত শ্রেণির মাছ। এ মাছ কোন কারনে বাঁধাগ্রস্ত হলে সেখানে আর আসে না।
তিনি আরো বলেন, জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এসয়ে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। পায়রা নদীতে অসর্ংখ্য ডুবো চর এবং স্্েরাত না থাকায় ইলিশ আসছে না। তবে আমরা আশা বাদী আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পায়ড়ায় ইলিশ ধরা পরা শুরু হবে।