প্রায় ৪৫ বছর ধরে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছিল। সেই রাস্তা কেটে পুকুর করা হচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা অচিন্তপুর ইউনিয়নের মুখুরিয়া গ্রামে। রাস্তাটি কেটে ফেলায় কমপক্ষে তিন শতাধিক কৃষক তাদের আবাদ করতে বিপাকে পড়বেন বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। রাস্তার প্রতিবন্ধকতা রোধে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মুখুরিয়া গ্রামের সড়কের সঙ্গে যুক্ত অন্তত আড়াইশ মিটার একটি কাঁচা রাস্তা। ৪৫ বছর আগে এলাকার মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু সেটি রাস্তা হিসেবে সরকারি কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ হয়নি। রাস্তার দুই পাশের জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়ে ফসলি জমিগুলো এখন মৎস্য খামার করা হয়েছে। রাস্তা ধরে রবমাইল বিল ও গুড়াগুইড়া বিলের অন্তত ৩ হাজার একর জমি চাষ করেন এলাকার তিন শতাধিক কৃষক। ফসলের মৌসুমে মাঠ থেকে ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসল তুলে রাস্তাটি দিয়ে মুখুরিয়া, সিংরাউন্দ, রামজীবন নগর, কিল্লাতাজপুর গ্রামের কিছু অংশের মানুষ নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। রাস্তাটি কেটে নিজেদের মৎস্য খামারে মিশিয়ে দিচ্ছেন মৎস্য খামার মালিক গ্রামের বাসিন্দা পাভেল খান। এ নিয়ে পাভেলের চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান খান গ্রামের মানুষের গণস্বাক্ষর নিয়ে রাস্তাটি রক্ষায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪৫ বছর আগে নির্মিত রাস্তাটি চার গ্রামের মানুষ চাষাবাদের কাজের জন্য ব্যবহার করে। রাস্তার দুই পাশে পাভেল পুকুর নির্মাণ করায় রাস্তা ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়। স্থানীয়রা পাভেলকে রাস্তা মেরামতের জন্য বললে ক্ষিপ্ত হয়ে তর্কে জড়ান। এ নিয়ে গত ৯ জুন গৌরীপুর ধানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পাভেল। পরে কামরুজ্জামানও ১০ জুন থানায় পাল্টা জিডি করেন।
কামরুজ্জামান জেলা প্রশাসকের কাছে ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আফসানা। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আসেন। গত কয়েকদিন আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসলেও সোমবার (২২ আগস্ট) থেকে পুকুর পাড় ঘেঁষা রাস্তাটি শ্রমিক লাগিয়ে কেটে পুকুরে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও রাস্তাকাটা রোধে সেখানে কেউ যায়নি।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একদল শ্রমিক রাস্তাটি কেটে পুকুরে মিশিয়ে দিচ্ছেন।
অভিযোগকারী কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের বাবা-চাচারা মিলে ৪৫ বছর আগে রাস্তাটি করেছিলেন। কিন্তু রাস্তার শুরুর অংশ বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কেটে ফেলা হচ্ছে। পুকুরের কাঁদামাটি রাস্তায় ফেলতে চাইলে নিষেধ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করা অন্তত ৩০টি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।
এদিকে পাভেল বলেন, ফিসারির মাঝখান দিয়ে রাস্তা হতে পারে না। এটি পুরনো কোনও রাস্তা নয়। পুকুরের পাড়ের সঙ্গে একটি বাড়ির রাস্তা মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুকুরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা না দিয়ে খামারের একদিক দিয়ে ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে রাস্তা করে দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে প্রতিপক্ষ।
তিনি আরও জানান, যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে সেটি তিনি লিজ নিয়ে পুকুর করেছেন, মাটি কাটাচ্ছে জমির মালিক।
রামজীবন নগর গ্রামের কৃষক আমির হামজা বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাস্তাটি দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেখেছি। গ্রামের মানুষের জন্য রাস্তাটি জরুরি। কিন্তু সেটি কেটে ফেলা হচ্ছে। এই রাস্তাটিতে সরকারি খরচে একটি কালভার্ট করা হয়েছে।
সিংরাউন্দ গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, রাস্তাটি কেটে পুকুরে মিশিয়ে দেওয়ায় ফসলের মৌসুমে কৃষকদের ফসল ফলাতে কষ্ট করতে হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়েদুর রহমান জানান, নিজেদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জমিটি মালিকানাধীন। রাস্তাটি অবশ্যই স্থানীয় এলাকাবাসীর দরকার।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রাস্তা কেটে পুকুর করার কাজ বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করবে।