• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৫ সেতুর মাঝে গর্ত, ২টি দেবে গেছে

আমতলীতে ঝুঁকি নিয়ে ৭ সেতুতে ৪০ হাজার মানুষের চলাচল!

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত জুন ১৫, ২০২১, ১৩:২৭ অপরাহ্ণ
আমতলীতে ঝুঁকি নিয়ে ৭ সেতুতে ৪০ হাজার মানুষের চলাচল!

dav

জাকির হোসেন, আমতলী ॥ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় আমতলী উপজেলার ১৯ গ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী ৭টি লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ন। এর মধ্যে ৫টি সেতুর মাঝ খানের ঢালাই ধসে গর্ত হয়ে গেছে। ২টি সেতু আকস্মিক দেবে গেছে। ঝুঁিক পূর্ন এই সেতু দিয়ে ১৭ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে তাদের ভোগান্তি আর বিরম্বনার শেষ নেই।

    আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের মুছুল্লি বাড়ী সংলগ্ন সেতুটি চলতি মাসের ৮ জুন মঙ্গলবার সকালে দেবে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে চাওড়া খালের হলদিয়া হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও চন্দ্রা গ্রামের মাঝখানে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি লোহার সেতু নির্মান করে। এই সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন হলদিয়া, গুরুদল, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার লোক বিভিন্ন কাজে আমতলী শহরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আসা যাওয়া করে। চন্দ্রা গ্রামের লোকও এই সেতু পার হয়ে বিভিন্ন কাজে হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়ত করে। তছাড়া চন্দ্রা গ্রামের অর্ধশতাধিক শিশু রয়েছে হলদিয়া হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরাশুনা করে।

সেতুটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকি পূর্ন অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে সেতুটির মাঝ বরাবর দুই জায়গায় ১০-১২ ফুট ধরে ঢালাই ধসে গর্ত হয়ে রড বেড়িয়ে গেছে। এতে মানুষ কোন রকম পারাপার করতে পারলেও যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেতুটি বর্তমানে এতই নড়বরে যে সেতুর উপর কোন মানুষ জন উঠলে দুলতে থাকে। তাই সেতুটি যে কোন সময় ধসে হলদিয়া, চাওড়া এবং আমতলীর সাথে সড়ক যোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা জানান, ‘সেতুর মধ্য খান দিয়া সিমেন্টের ঢালাই পইর‌্যা যাওয়ায় এহন আর যানবাহন চলাচল করতে পারেনা।

     চাওড়া খালের হলদিয়া সেতুর মধ্য খান দিয়া সিমেন্টের ঢালাই পড়ে গিয়ে রড বের হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আগে মোরা ধান, চাউল ডাইল ব্যাচার লইগ্যা গাড়িতে এবং টমটমে কইর‌্যা আমতলী আডে নিয়া যাইতাম। এহন এই সেতু ভাইগ্যা যাওয়ায় বহু কষ্ট কইর‌্যা মোগো ধান চাউল আডে নিতে অয়। এতে মোগো খরচ অনেক বাইর‌্যা গ্যাছে।’ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ন থাকায় কোন যান বাহন না চলায় গর্ববতী মা কিংবা মুমুর্ষ বয়স্ক রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় মহা বিপাকে। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া দুরহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের বাড়িতে বসেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। নিরুপায় হয়ে তখন গ্রাম্য কবিরাজ কিংবা হাতুরে ডাক্তারে শরনাপন্ন হতে হয়।

চাওড়া খালের রাঢ়ী বাড়ির সামনে এবং পূর্ব চন্দ্র গ্রামের মাঝ খানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ একই সময়ে আরেকটি সেতু নির্মান করে। ওই সেতুটিও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির মাঝ বরাবর গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ঢালাই ধসে বড় কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেতু মেরামত করলেও পুনরায় আবার ধসে পড়ে। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন উত্তর তক্তাবুনিয়া, পূর্ব চন্দ্রা, লক্ষী গ্রামের কয়েক হাজার লোক প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সেতুটি নরবরে হওয়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পড়েছে উল্লেখিত গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের রামেশ্বর জানান, ‘ব্রীজটা ভাইগ্যা যাওয়ায় মোগো এহন অনেক কষ্ঠ কইর‌্যা চলাচল করতে হয়।

চাওড়া খালের চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী এবং কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এবং আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের শামিম ম্যালাকারের বাড়ির সামনের লোহার সেতুটি মে মাসের মাঝামাঝি সময় ১০-১২ ঢালাই আকস্মিক ভাবে দেবে যায়। এর পর থেকে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সেতুটি আমতলী সদর ইউনিয়ন এবং চাওড়া ইউনিয়নের সেতুবন্ধন হলেও বর্তমানে এই সেতু ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় অনেক পথ ঘুরে বিকল্প হিসেবে তাদের চলাচল করতে হয়। এই সেতুটি দেবে যাওয়ায় চাড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা এবং আমতলী ইউনিয়নের মজিহষডাঙ্গা এবং পূর্ব মহিষ ডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতেত পড়েছে। এই গ্রামের বসিন্দা আবলু কালাম মিস্ত্রী জানান, ‘সেতটিু ডাইব্যা যাওয়ায় মোরা অনেক ভোগান্তিতে আছি। মোরা এহন এক পার গোনে আরেক পার যাইতে পারি না।

চাওড়া ইউনিয়নের লোদা গ্রামের লোদা খালের হাফেজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন সেতুটিরও বেহাল দশা। চলতি বছর ফেব্রয়ারি মাসের প্রথম দিকে মাদরাসা সংলগ্ন সেতুটির উপর দিয়ে মালবোঝাই একটি টমটম যাওয়ার সময় সেতুর মাঝ বরাবর সিমেন্টের ঢালাই ধসে পরে বিশাল আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে মেরামতের অভাবে ওই সেতু দিয়ে মানুষ কোন রকম চলাচল করলেও যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

একই খালের ১কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লোদা সরকারী বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটিরও একই অবস্থা। বছর খানেক আগে সেতুটি মাঝ খান দিয়ে প্রায় ৮-১০ ফুট ধরে ধসে পরে বিশাল আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়। ঢালাই ধসে লোহার রড বেড়িয়ে পরে। সেতুটি অনেক পুরানো হওয়ায় এখন নরবরে হয়ে গেছে। সেতুটির রেলিংও খসে পড়েছে। এ অবস্থায় সেতুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেওয়া এখন প্রায় ব্যাবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এই সেতু দিয়ে লোদা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পার হয়ে শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়ত করে। সেতুটি বর্তমানে এতই নরবরে যে যে কোন সময় পুরো সেতু ধসে পড়তে পারে।স্থানীয় শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, অনেক ভয়ের মধ্যে দিয়ে সেতু পার হই। সেতুটি যে কোন সময় ধসে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।

চাওড়া খালের চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী সংলগ্ন সেতুটির মাঝ বরাবর দেবে গেছে।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের মুছুল্লি বাড়ী সংলগ্ন সেতুটি চলতি মাসের ৮ জুন মঙ্গলবার সকালে দেবে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে। এতে ভোগান্তিতে পরেছে ৮ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ।

জানাগেছে, ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালে মুছুল্লি বাড়ীর সংলগ্ন স্থানে লোহার সেতুটি নির্মাণ করে। ওই সময় ঠিকাদার নি¤œমানের কাজ করায় দুই বছরের মাথায় সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে সেতুটির একটি অংশ দেবে যায়। গত ৯ বছর ধরে দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ৮ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করেছে। মঙ্গলবার সকালে সোনাখালী পাড় থেকে মাঝখানের ৪টি পিলারসহ সেতুটি দেবে পানির সঙ্গে মিশে যায়। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর, গেরাবুনিয়া, সোনাখালী, দরিটানা, পশ্চিম সোনাখালী ও আমতলাসহ ৮ টি গ্রামের। যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে উল্লেখিত গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান,‘সেতুটি দেবে যাওয়ায় ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা গ্রামের চারের খালের সেতুটির ও ভগ্ন দশা। লোহার এই সেতুটির মাঝ বরাবর অংশ ১০-১২ ফুট ধরে ২০১৯ সালে মালবোঝাই ট্রলির ভারে ধসে পড়ে। এর পর সেতুটি কোন সংস্কার করা হয়নি। সেতুটি সংস্কার না করায় বর্তমানে পশ্চিম চিলা, চিলাসহ ৪ গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিরাজ কুমার বিশ্বাস জানান, সেতুটি সংস্কার না করায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে অনেক সময় মুমুর্ষ রোগীদের পরিবহনে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লা আল মামুন জানান, ‘উল্লেখিত ৭টি লোহার সেতুর স্থলে গার্ডার সেতু নির্মান করা হবে। এজন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

বিডিক্রাইম/হৃদয়/মফস্বলডেস্ক