আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের ছয় দরিদ্র পরিবারের নিকট থেকে দাবীকৃত ঘুষের টাকা না পেয়ে খাদ্য বান্ধব (ফেয়ার প্রাইজ) কর্মসুচীর তালিকায় নাম থাকলেও চাল না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ডিলারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয় আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভ’ক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানাগেছে,২০১৬ সালে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল দেয়ার জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসুচী (ফেয়ারপ্রাইজ) শুরু করেন সরকার। ওই কর্মসুচীর আওতায় আমতলী উপজেলায় ১৩ হাজার ২’শ ৪৫ জন উপকার ভোগী চিহিৃত করা হয়।
বছরে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর এই ৫ মাস ওই চাল বিতরনের জন্য উপজেলায় ২৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন। গত ৫ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে উপজেলার হতদরিদ্র ১৩ হাজার ২’শ ৪৫ পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত জুন মাসের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েক’শ হতদরিদ্র পরিবারের নাম খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর তালিকা থেকে দরিদ্র পরিবারের নাম বাতিল করে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের পছন্দ সই কর্মী সমর্থকদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। এতে বিপাকে পড়েছে উপজেলার চাল বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারগুলো।
এদিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে দুই হাজার দুই’শ ৮০ হতদরিদ্রদের নাম খাদ্য বান্ধব তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কলাগাছিয়া গ্রামের ৫’শ ২০ পরিবার গত পাঁচ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে।
গত পাঁচ বছর ধরে ওই গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লার নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে তাদের চাল দেয়নি ডিলার আবু জাফর।
ভূক্তভোগীরা চলতি মাসের চাল আনতে গেলে ডিলার মো. আবু জাফর খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর কার্ড ও টাকা রেখে দিয়েছেন।
কার্ড এবং টাকা রেখে দেওয়া অভিযোগে ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার চাল বঞ্চিত জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লা ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাল না দেয়া ও কার্ড রেখে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে আমতলীর ইউএনও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কাওসার হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শ্বেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, ও মামুন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমরা চাল পেয়েছি। হঠাৎ চলতি মাসে চাল নিতে এসে দেখি আমাদের নাম উধাও হয়ে গেছে। তারা আরো বলেন, ডিলার জাফর টাকা খেয়ে আমাদের নাম কেটে অন্য মানুষকে দিয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
একই গ্রামের খালেদা বেগম বলেন, চাউল দেয়ার কতা কইয়্যা টাহা ও কার্ড লইয়্যা গ্যাছে ডিলার আবু জাফর কিন্তু চাউল দ্যায় নাই। আগে চাউল পাইতাম হ্যাতে ভালোই চলতাম। মুই গরিব মানু ক্যামনে চলমু হেইয়্যা কইতে পারি না।
ডিলার আবু জাফর টাকা নেওয়া অভিযোগ অস্বাীকার করে বলেন, আগে তাদের তালিকায় নাম ছিল। তাই চাল দেওয়া হত। তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এখন তাদের চাল দেওয়া হয়নি।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার কার্ড ধারী দরিদ্র পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয় ডিলারা অফিসের কথা বলে নতুন বই দেওয়ার জন্য পুরাতন বই রেখে দেন এবং নতুন বই দেওয়ার জন্য বাড়তি ২শ’ করে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাকা না দিলে তাদের চাল দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। চাল না পাওয়ার ভয়ে দরিদ্ররা ডিলারদের ২ শ’ করে টাকা দিয়ে চাল নিয়ে মুখ বুঝে বাড়ি যাচ্ছেন।
তবে এ বিষয়ে হলদিয়ার টেপুরা বাজারের ডিলার জাকির মাতুব্বর টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ২শ’ নয় ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে অফিসের নির্দেশে।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর চাল বিতরনের তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কেন দরিদ্র পরিবারগুলো চাল পায়নি এ বিষয়ে ডিলারের সাথে কথা বলে সিদান্ত জানাবো।
আমতলী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সমির কুমার রায় বলেন, ইউএনওর নিকট থেকে ৬ জনকে চাল না দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা গেছে, আগের চেয়ারম্যান তাদের নাম বাদ দিয়ে তালিকায় অন্যদের নাম দিয়েছে তাবই তারা আর চাল পায়নি।
চাল বিতরনে নতুন বইয়ের বিষয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। নতুন বই বাবদ টাকা নেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, আমরা কাইকে টাকা নেওয়ার জন্য বলিনি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. কাওসার হোসেন বলেন, চাল না পাওয়া বিষয়ে একটি লিখিত অীভযোগ পেয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
তবে তিনি মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন আগের চেয়ারম্যান ওই চয়জনের নাম বাদ দেওয়ায় তারা চলতি মাসের চাল পায়নি। এ ছাড়া নতুন বইয়ের নামে টাকা নিওয়ার বিষয়টি খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।