বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল: দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের এ সর্বজনীন দুর্গোৎসব ঘিরে সারাদেশে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগরেরা।
সারাদেশের মতো ঝালকাঠির ১৬৯টি মণ্ডপেও চলছে প্রতিমা তৈরির দ্বিতীয় পর্বের কাজ। কাঠের উপরে খড়কুটো মুড়িয়ে প্রাথমিক মাটির প্রলেপের কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের অবয়ব তৈরিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। এ পর্ব শেষে শিল্পীর রংতুলিতে পূর্ণ অবয়ব পাবে দেবী রূপ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতিবছর অসুরের বিনাশ করতে দেবী এ ধরাধামে আবির্ভূত হন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার ও গ্লানি দূর করার জন্যই এ পূজার আয়োজন। এ মুহূর্তে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেবীকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘরে ঘরে চলে আসছে পূজা আর উৎসবের আমেজ।
এ বছর পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। ১৫ অক্টোবর দশমীপূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
জেলার বিভিন্ন দুর্গা মন্দির ঘুরে দেখা যায়, শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক প্রথম পর্বের কাজ প্রায় শেষের দিকে। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এবার জেলার ১৬৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় শহরের পাবলিক হরিসভায় কর্মরত প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে। তারা চারজনের একটি টিম প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ সেট প্রতিমা তৈরির ফরমাশ নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে ঘোটকে চড়ে, আর যাবেন দোলায় চড়ে। এবছর দেবীর নিকট বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে বিশ্ববাসীর মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
প্রতিমা কারিগর ভাস্কর শ্রীবাস গাইন জানান, প্রথমে কাঠের উপরে খড়কুটো দিয়ে ভ্যালা তৈরি করে প্রতিমা প্রস্তুত করি। এর উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করেছি। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ করে রংয়ের কাজ শুরু করবো। সময় মতো মণ্ডপ কমিটির কাছে সেট হস্তান্তর করতে পারবো।
ভবেন্দ্রনাথ পাল নামের আরেকজন প্রতিমা কারিগর জানান, আমরা দ্রুত কাজ করছি। বরিশালে একটি ও ঝালকাঠির ১৩টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির অর্ডার নিয়েছি। অনেকে অল্প বরাদ্দেও প্রতিমা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, বিশেষত যারা বাসা-বাড়িতে পূজা করেন। তাদের জন্য বাড়িতে বসে প্রতিমা তৈরি করে দেয়া হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাজ করতে সুবিধা হয়।
প্রতিমা শিল্পী মিলন পাল জানান, এ পেশায় পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। তাই অনেকে এ পেশায় আসতে চায় না, অন্য পেশায় চলে যায়। করোনা মহামারির কারণে দেশে পূজা-পার্বণ এমনিতেই কম হয়। প্রতিমার দাম ও খরচ যা হয়, তাও আমরা পাই না।
কারিগর সৈকত দাশ বলেন, এ কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে এখন খরচ অনেক বেশি পড়ে। কিন্তু সে অনুযায়ী আমাদের উপার্জন হয় না।
ঝালকাঠি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর তরুণ কর্মকার জানান, কয়েক সপ্তাহ পরেই শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এবছর ঝালকাঠি জেলায় ১৬৯টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কারিগররা। এরইমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুতই শিল্পীর রং-তুলির ছোঁয়ায় মূর্ত হয়ে উঠবেন দেবী। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা মন্ডপে মণ্ডপে পাহারা দিচ্ছেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জেলার পূজা প্রস্তুতির সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন বলেও জানান তিনি।