নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) কলেজের ছাত্রী সাদিয়া আক্তারকে (২১) গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিরাজুল ইসলামের (২৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাত দেড়টার দিকেশের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ৮ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১০ মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ১০ ডিসেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর প্রমাণপত্রে ‘ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট’ (শারীরিক জখম) শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তারেক জানান, হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কি কারণে মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। গত ৩ ডিসেম্বর সিরাজুল ইসলামকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একদিন পর ৪ ডিসেম্বর বরিশাল নিয়ে আসা হয় এবং আদালতে সোপর্দ করা হয় ৫ ডিসেম্বর। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে প্রদানের পর সিরাজকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর অসুস্থ অবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষ বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি করলে গতকাল রাতে তার মৃত্যু হয়। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. বদরুজদৌজা জানান, আসামি সিরাজুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর সময় তার শরীরে জখম ছিল। অবস্থার অবনতি হলে সিরাজকে শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন জানান, সুস্থ অবস্থায় আসামি সিরাজকে কারাগারে পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে– হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২২ নভেম্বর বরিশাল নগরীর ডেফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আলমগীর খানের মেয়ে সাদিয়া আক্তার বাসা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে আর বাসায় ফিরেনি। ওই দিনই বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেন তার বাবা আলমগীর খান। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার ১৩ দিন পর ৩ ডিসেম্বর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে মো. সিরাজুল ইসলাম (২৪) এবং মো. হাফিজ আকন (১৫) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন শিক্ষার্থী সাদিয়ার সঙ্গে মোবাইলে প্রেমের অভিনয় করেন। এরপর বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আ.রব হাওলাদারের ছেলে নাজমুল ইসলাম নয়নের (৩০) সহায়তায় সাদিয়াকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া এলাকার ডেকে নিয়ে ৩ জন মিলে গণধর্ষণ করে। এ সময় সাদিয়া চিৎকার করলে গলা টিপে হত্যা করে বলেশ্বর নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয় তারা। তবে এখন পর্যন্ত সাদিয়ার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সাদিয়ার বাবা আলমগীর খান বাদী হয়ে মামলা করেন।