• ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ১৯:২২ অপরাহ্ণ

এম.এস.আই লিমন ॥ বরিশালের রাতের নগরী ধাবড়িয়ে বেরাচ্ছে দানবরুপে ঘাতক লোকাল ট্রাক। রাতের নগরীতে চলাচলের জন্য কোন নিয়মকানুন মানছে না তারা। অদক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন আর প্রতিযোগিতার লাগামহীন বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। ফলে অহরহ এসকল দানবরুপে ঘাতক লোকাল ট্রাকে পিষ্ট হয়ে ঝরছে তাঁজা প্রান। অনুসন্ধানে জানা গেছে বরিশাল নগরীতে রাতের বেলায় বৈধ অবৈধ মিলে দেড় থেকে দুই শতাধিক লোকাল ট্রাক চলাচল করছে। বিআরটিএ নিবন্ধিত ৭০/৮০ টি বৈধ ট্রাক থাকলেও অনিবন্ধিত বাকী সব লোকাল ট্রাকগুলো জব্দ করা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্টরা। অদৃশ্য কারনে অনিবন্ধিত ফিটনেস বিহীন লোকাল ট্রাক জব্দ করা সহ ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বরিশাল নগরীতে রাতে অনায়াসেই চলাচল করায় দূর্ঘটনা ঘটে চলছে অহরহ। অপর দিকে সরকার হারাচ্ছে লক্ষাধীক টাকা রাজস্ব। সরকারের রাজস্ব হারানোয় মাথা না ঘামিয়ে নগদ মাসোহারা নিয়ে আইনের রক্ষক হয়েও ভক্ষক বনে গেছে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক লোকাল ট্রাক মালিক জানায়, বৈধ উপায়ে ব্যবসা করলেও বিট মানি দিয়ে চালাতে হয় আর ফিটনেস বিহীন নিবন্ধন ছাড়া ট্রাকও বিটমানিতেই চলছে বাঁধাবিহীন। ফলে অনিবন্ধিত ফিটনেস বিহীন লোকাল ট্রাক গুলো বিট মানিতেই চালাচ্ছে মালিকরা। ট্রাফিক পুলিশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলীয় কতিপয় নেতাদের বিটমানি মাসোহারা দিয়ে আসায় তাদের ব্যবসা করাটাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে। সে কারনে দক্ষ চালকদের বেতন মজুরী দিয়ে না পোশানোয় হেলপার ও অদক্ষ চালকদের দ্বারাই কম টাকা মজুরীতে ট্রাক চালাচ্ছে তারা। কিশোর, অদক্ষ চালকদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেপরোয়া গতিতে রাতের নগরীর বিভিন্ন সড়কে মাল আনা নেয়ার কাজ করানোয় দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া সহ ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রান। বরিশাল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কালাম মোল্লা এ বিষয়ে দেশ জনপদকে জানায়, কিশোর চালক দ্বারা ট্রাক চালানো যাতে না হয় ট্রাক মালিকদের তা জানানো হয়েছে। অনিবন্ধিত ফিটনেস বিহীন যেসকল ট্রাক রয়েছে তা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে জব্দ করা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার নিয়ম ট্রাফিক পুলিশের। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তারা এ বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। তাদের পক্ষ থেকে অনিবন্ধিত ফিটনেস বিহীন লোকাল ট্রাক জব্দ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হলেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ আদৌ নেয়া হয়নি? পরবর্তী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাসিক সভাতে পুনরায় উপস্থাপন করবে বলেও জানায়। তিনি আরো জানায় গত বছরে ৯ টি লোকাল ট্রাকে দূর্ঘটনা ঘটেছে আর এতে ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিয়ন্ত্রণহীন অদক্ষ চালকদের দ্বারা বরিশালের বিভিন্ন সড়কে মালামাল আনা নেয়া করায় বেপরোয়া গতির ফলেই দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারন হিসিবে তিনি আরো জানায়,বরিশালে বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পেলেও সড়কগুলো প্রশস্থতা বাড়েনি। থ্রি-হুইলার অটোরিকশা মাহিদ্রা চলাচলের বিধিনিষেধ অমান্য করে যে কোন সময় বিভিন্ন সড়কে ঢুকে পরায় দূর্ঘটনা বাড়ছে বলেও জানায় তিনি। বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, নিবন্ধন বিহীন ট্রাক গুলোর পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। এ দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। তারা অনিবন্ধিত ট্রাকগুলো জব্দ কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে অনিবন্ধিত ট্রাক নিবন্ধন করতো মালিকরা? সড়কে ফিটনেস বিহীন লোকাল ট্রাক গুলো রাতের আধারে হেড লাইট ছাড়াই মাল আনা-নেয়ার কাজ করলে পথচারীরা অহরহই এসকল দানবরুপে ঘাতক লোকাল ট্রাকের দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার আহতরা পঙ্গুত্ব ভোগ করে আসছে। সূত্রমতে, গতবছর লোকাল ট্রাকে পিষ্ট হয়ে স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যুসহ আলোচিত নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সড়কে ট্রাকের দূর্ঘটনার কবলে মোটর সাইকেল চালক নিম্ন আয়ের এক মেকানিককে পিষ্ট করে প্রান চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ আমজনতা ঘেরাও দিয়ে ট্রাকটি সড়কের উপর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এমন মর্মান্তিক ঘাতক লোকাল ট্রাক দূর্ঘটনার কবলে প্রান নাশ সহ পঙ্গুত্ব ভোগ করা ভুক্তভোগীদের সংখ্যা বেশ লম্বা হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অল্প সময়েই বেরিয়ে যায় ঘাতক ট্রাক সহ চালকরা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) যানবাহন শাখার প্রধান মোঃ মাইনুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীতে লোকাল ট্রাক চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। রাত নয়টার পূর্বে নগরীর সড়কে লোকাল ট্রাকের প্রবেশ সম্পুর্ণই নিষেধ রয়েছে। ট্রাক চালক ও মালিকদের নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না অধিকাংশরাই। তাদের জনবল সংকটের কারনে মনিটরিং সম্ভব হয়ে উঠছেনা। নগরীর বিএমস্কুল সহ বিভিন্ন সময়ে মাসিক মাসোহারা বিভিন্ন স্থানে বসেই গ্রহন করে এক ট্রাফিক বলে সার্জেন্টের লোক। তবে মাঝে মধ্যেই উপরোস্থদের চাপে কিংবা মাসিক কার্যহিসাবে গড়মিল দেখা দিলে দু একটি মামলা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনের ভূমিকা যাহির করে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক এসি মোঃ ফয়জুর রহমান বলেন, অনিবন্ধিত, ফিটনেস বিহীন লোকাল ট্রাক গুলোর থেকে মাসোয়ারা নেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। এমন বিষয় ঘটলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানায় তিনি।