• ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

৯ বছর যাবত বন্ধ হাঁস ও ছাগলের খামার

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ১৩:০৫ অপরাহ্ণ
৯ বছর যাবত বন্ধ হাঁস ও ছাগলের খামার

এস এন পলাশ ॥  ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ১২’শ হাঁস ও ৫’শ ছাগলের চাহিদা পূরনকারী খামারটি মুখথুবড়ে পরেছে। ৯ বছর ধরে ২৫ টি স্থাপনার যন্ত্রাংশ ফিটিংস, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সহ আসবাবপত্র গুলো খোয়া যাচ্ছে দিনের পর দিন। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া হাঁস ও ছাগলের খামারটি ২০১০ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পর অদ্যবধি পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। শুধু তাই নয় খামারটির পরিত্যাক্ত স্থাপনা গুলো পরিণত হয়েছে স্থানীয়দের মাদক সেবন ও অসামাজিক কর্মকান্ডের নিরাপদ আশ্রয়। ৯ একর জমিতে স্থাপিত হাঁস ও ছাগলের এ প্রজনন খামারটি পরিত্যাক্ত থাকায় দিন দুপুরের স্থানীয়রা চুরি করে নিচ্ছে মূল্যবান মালামাল। খামারটিতে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর কি ধরনের সম্পদ ছিল তার কোন হদিস নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এ উন্নয়ন খামার এর এ্যানিমেল প্রাডাকশন অফিসার সুকান্ত কর বলেন, হাঁস ও ছাগলের খামার বন্ধ হওয়ার পর কোন মালামালের সিজার লিষ্ট করা হয়নি, যার জন্য কি কি মাল খোয়া গেছে তা বলা মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাঁস ও ছাগল প্রকল্প ভিত্তিক প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। তবে আমার জানামতে চলতি বছরের মধ্যে ছাগলের খামারটি আবার পুরোদমে চালু হবে। পাশাপাশি বর্তমানে জনবল সংকট রয়েছে বিধায় হাঁস ও ছাগলের খামার ২টি পাহারা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বরিশাল জেলার একমাত্র হাঁস ও ছাগল প্রজনন খামারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের পুষ্টি চাহিদা, উৎপাদন চাহিদা পূরনে ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ছাগলের ও হাঁসের খামার তৈরীর উদ্যোক্তাও কমছে। এনিয়ে বরিশাল সদর উপজেলার কড়াপুর এলাকার কৃষক আঃ খালেক হাওলাদার বলেন, হাঁসের খামারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন অল্প মূল্যে হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করতে পারছি না। একই ভাবে জাগুয়া ইউনিয়নের কৃষক মাহমুদ হাওলাদার জানান, ছাগলের খামারটি দীর্ঘ ৯ বছর যাবত বন্ধ থাকায় ভাল জাতের কোন ছাগল এখন পাচ্ছি না তাই এখন ছাগল পালন করা ছেড়ে দিয়েছি। অথচ, এই ছাগল বছরে ২ বারে একাধিক বাচ্চা দেয় তাতে সংসারের আর্থিক অনটন ঘুচতো এবং দুধ ও মাংস খেয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হতো, পাশাপাশি মা ছাগলেরও অভাব হতো না। সূত্রে আরো জানাগেছে, বরিশাল জেলার বৃহৎ এই খামারটিতে প্রতিদিন ১২’শ হাঁস ও ৫’শ ছাগল মজুদ থাকতো খামারীদের চাহিদা পূরনের জন্য। হাঁসের খামারটির ছিল ৪ একর জমির উপর। এতে অফিস ভবন ছিল ১টি, হাঁসের সেট ছিল ৬টি, প্রতিটিতে ২’শ করে হাঁসের ধারন ক্ষমতা ছিল, ব্র“ডার সেট ১টি, গাড়ির গ্যারেজ ১টি এবং গোডাউন ১টি। একই ভাবে ছাগলের খামারটি ৫ একর জমিতে নির্মিত। এতে ছাগলের সেট ৬টি, হাসপাতাল সেট ১টি, ডর্মেটরি সেট ১টি, ছাগল চরানোর মাঠ ৪টি, অফিস ভবন ১টি, গাড়ির গ্যারেজ ১টি, গোডাউন ১ টি এক সাথে ৫ থেকে ৬শ ছাগল পালন করা হতো। অপর দিকে নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় মুরগীর ফার্মটি চালু থাকায় ডিমসহ উৎপাদন ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। কাশিপুর হাঁসের খামারে ১টি বাচ্চা মাত্র ২২ টাকায় বিক্রি করা হতো। সেই হাঁস মাত্র ২/৩ মাসের ব্যবধানে বাচ্চা হাঁসটি খাবার উপযোগী হয়ে যেত এবং বাজার মূল্য ৩ থকে ৪ টায় বিক্রি করে খামারিরা আর্থিক লাভবান হতো। এদিকে ছাগলের খামারটিতে একটা ছাগল ছানা বিক্রি করা হতো ৫শ টাকায়। ৫/৬ মাস কৃষকরা লালন পালন করার পর ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করে আর্থিক লাভবান হতো তারা। হাঁস ও ছাগলের খামার বন্ধ থাকায় খামারী কৃষকদের লাভ তো হচ্ছেই না উল্টো মাথায় হাত। তবে বরিশাল জেলা কৃষক খামারীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হাঁস ও ছাগলের খামার পুনরায় চালু করার দাবী জানান। এদিকে বরিশালের বাজার গুলোতে ছাগলের মাংসের চাহিদা পূরণ করতে নির্ভর করতে হয় উত্তর অঞ্চলের খামারিদের উপর। এ ব্যাপারে মাংস ব্যবসায়ী সুমন বলেন, বাজারে মাংসের চাহিদা পূরণ করতে দূর দূরান্ত থেকে পরিবহন যোগে মোটা অংকের ভাড়া দিয়ে ছাগল আনতে হয়, ফলে দামও বেশি পরে। তবে স্থানীয় ভাবে ছাগল ক্রয় করতে পারলে দাম কম হতো।