• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

৫৫ বছর ধরে পায়রার ভাঙ্গনে আড়াই হাজার একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১৭:২৮ অপরাহ্ণ
৫৫ বছর ধরে পায়রার ভাঙ্গনে আড়াই হাজার একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; captureOrientation: 0; algolist: 0; multi-frame: 1; brp_mask:0; brp_del_th:null; brp_del_sen:null; delta:null; module: photo;hw-remosaic: false;touch: (-1.0, -1.0);sceneMode: 8;cct_value: 0;AI_Scene: (-1, -1);aec_lux: 0.0;aec_lux_index: 0;albedo: ;confidence: ;motionLevel: -1;weatherinfo: weather?Sunny, icon:0, weatherInfo:101;temperature: 47;

জাকির হোসেন, আমতলী॥ ৫৫ বছর ধরে ভয়ংকর পায়রার অব্যাহত ভাঙ্গনে বরগুনার তালতলীর উপজেলার নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা ও নলবুনিয়া গ্রামের পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুরে আড়াই হাজার একর কৃষিজমি ঘরবাড়িসহ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

এখনো ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটে তিন গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের। ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত ব্লক ফেলে তাদের ঘরবাড়িসহ কৃষি জমি রক্ষার দাবী জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তালতলীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হিমেল বলেন, পায়রা ভাঙ্গনে এপর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার একর কৃষি জমি ঘরবাড়িসহ পায়রার গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, গত দুই বছওে দেড় থেকে প্রায় দুইশ’ ফুট কৃষি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনে বাঁধ বিলিেিনর পর ৪বার স্থান পরিবর্তন করে নতুন করে বাঁধ পুন:নির্মান করা হয়েছে।

এখন আবার ঝুঁকির মধ্যে পরেছে তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাঁধ। বাঁধটি শুকনো মৌসুমে স্থান পরিবর্তন করে পুন:রায় নির্মান করতে হবে। একই কথা বলছেন তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল লতিফ হাওলাদার।

তিনি বলেন, পায়রার বাঙ্গনে এপর্যন্ত প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার একর কৃষি জমি পায়রা ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। চারবার বাঁধের স্থান পরিবর্তন করে পুন:নির্মান করা হয়েছে।

জয়াল ভাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. জাহিদ হোসেন বলেন, পায়রার ভাঙ্গনে জমিজমা ঘরবাড়ি হারিয়ে শত শত মানুষ নি:স্ব হয়ে রাস্তার ফকির হয়ে গেছে।

বঙ্গোপ সাগরের মোহনায় দক্ষিণ উপকূলের সবচেয়ে ভয়ংকর নদী হচ্ছে পায়রা। এই নদীর মোহনায় নদীর তীরে অবস্থিত নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা ও নলবুনিয়া গ্রাম। প্রায় সাড়ে পাঁচ যুগের ভাঙ্গনে লন্ডভন্ড হয়েছে এই গ্রামের মানচিত্র।

শত শত ঘরবাড়ি, হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে আদি বাসিন্দারা কোথায় হারিয়ে গেছে তারও কোন ঠিকানা নেই এই এলাকার মানুষের কাছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ বিলিন হওয়ায় স্বাধীনতার পর অন্তত তিন থেকে চারবার নতুন করে বাঁধ নির্মান করা হয়েছে।

তবুও ভাঙ্গছে বাঁধ ঠেকানো যাচ্ছে না কোন মতেই। তবে স্থানীয়দের দাবী ব্লক ফেলে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭-৬৮ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মান করা হয়। ১৯৭০ সালের প্রলঙ্করী ঘূর্নিঝড় এবং জলোচ্ছাসের পর পায়রা নদীতে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডর, রোয়ানু, আইলা, আকাশ,ইয়াস, বিজলী, মিধিলী, মোখা, মোরা, সিত্রাং, রেশমা এবং সর্বশেষ রিমালের সময় জলোচ্ছাস এবং আমাবশ্যা ও পূর্নিমার জেয়ারে সাগর ও পায়রা নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়।

একের পর এক ভাঙ্গনে তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা ও নলবুনিয়া গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুরে এপর্যন্ত ভাঙ্গনে ঘরবাড়িসহ আড়াই হাজার একর কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

শুধু জলোচ্ছাসে নয় আমাবশ্যা কিংবা পূর্নিমার জোয়ারের সময় পায়রা নদীতে পানি বৃদ্দি পেলেই শুরু হয় ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের ফলে তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা ও নলবুনিয়ার বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ ঘেষা বাসিন্দাদের অন্তত ৩-৪ বার বাঁধের স্থান সড়িয়ে নির্মান করা হয়েছে। তাতেও রক্ষা হচ্ছে না।

এখনও ভাঙ্গছে। জয়ালভাঙ্গা ও তেতুলবাড়িয়া গ্রামকে পায়রা ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ২০২৪ সালে জিওব্যাগ ফালানো হয়। তাতেও রক্ষা হচ্ছে না ভাঙ্গন।

ইতো মধ্যে তেতুল বাড়িয়া গ্রামের ফোরকান দফাদার বাড়ির সামনে, ছগির চাপরাশির দোকান ও জসিম প্যাদার বাড়ির সামনে দিয়ে জিও ব্যাগ ধসে আবার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।

এখন ওই গ্রামের প্রায় ২ হাজার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে যে কোন জলোচ্ছাস কিংবা পায়রা নদীতে পানি বৃদ্দি পেলেই বাঁধ ধসে তলিয়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম।

তেতুল বাড়িয়া গ্রামের জসিম প্যাদা ও হাবিব আকন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের রক্ষার জন্য পায়রা নদীর তীরে যে জিও ব্যাগ ফালানো হয়েছে তাতে বালির পরিবর্তে মাটি দেওয়া হয়েছে ফলে পানির তোরে মাটি ধুয়ে যাওয়া ধস নেমেছে।

বাঁধ ভাঙ্গলে যে কোন সময় আমাদের গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তেতুল বাড়িয়া গ্রামের এমাদুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ৩ বিঘা জমি ছিল।

ছিল বড় বাড়ি। ৪ বারের ভাঙনে সব নদীতে লইয়া গ্যাছে। ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন ১ শতাংশ ফসলের জমিও নেই। কোনোমতে রাস্তার ধারে একটা ঘর বানাইয়া পোলা মাইয়া লইয়া ঘুমাই।

হেও আবার এহন ভয়ের মধ্যে আছি ভাঙনে আবার ঘরডা লইয়া যায় কিনা। জয়াল ভাঙ্গা গ্রামেরও একই অবস্থা। এখানে তাপবিদ্যুতের এলাকাকে ব্লকফেলে সুরক্ষা দেওয়া হলেও তার পাশ থেকেই দক্ষিণ দিকে নলবুনিয়া হয়ে বঙ্গোপ সাগর মোহনা পর্যন্ত চলছে ভাঙ্গন।

জয়ালভাঙ্গা গ্রামে ভাঙ্গনের তান্ডবে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকা পায়রার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের ফলে হাজার মানুষ তাদের বসতি, কৃষি জমি হারিয়ে কোথায় চলে গেছে তারও কোন ঠিকানা নেই।

ভাঙ্গনের ফলে একাধিকবার বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ সড়িয়ে নির্মান করা হয়েছে । এতে কৃষি জমি বসতিসহ অবশিষ্ট জমিও চলে গেছে বাঁধ নির্মানে। নলবুনিয়া গ্রামেরও একই অবস্থা।

ভাঙ্গনে এখন নলবুনিয়া ঝাউবনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ দুর্যোগ রিমালের তান্ডবে নলবুনিয়া ভাঙ্গনে হাজার হাজার গাছ ভেসে চলে গেছে সাগরে। জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ষাটোর্ধ রিয়াজ মুন্সি বলেন, বাবা ভাংগনে মোর সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।

১৫ বিঘা কৃষি জমি ছিল। এহন কিছু নাই। পায়রা নদীতে মাছ ধইর‌্যা গুরাগারা লইয়া কোন রহম সংসার চালাই। একই গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গনের লইগ্যা বহুবার রাস্তা বদলাইতে অইছে।

একদিকে পায়রায় ভাইঙ্গা নেছে আরেক দিকে রাস্তায় নেছে। এহন জমি বলতে মোগো কিছু নাই। আলতাব আকন নামে আরেকজন বলেন, মুই বাবা ৪-৫ বার ঘর বদলাইছি।

হেইয়ার পর বাবা কত মানুষ ভাঙ্গনে শ্যাষ অইয়া এই গ্রাম ছাইর‌্যা চইল্যা গ্যাছে হেইয়ার ইসাবও কইতে পারমু না। নলবুনিয়া গ্রামের বশির সর্দার বলেন, নলবুনিয়ার বনও ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে।

জলোচ্ছাসসহ বিভিন্ন বন্যায় হাজার হাজার গাছ উপরে সাগরে ভেসে গেছে। এখনো প্রচুর গাছ শিকরসহ উপরে পরে আছে নদীর পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রাকিব বলেন, তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা ও নলবুনিয়া গ্রামকে পায়রার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

বরাদ্দ পাওয়া গেছে কাজ শুরু করা হবে। জিউব্যাগে বালির পরিবর্তে মাটি দেওয়ার বিষয়ের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।