এম ফোরকান ॥ নগরীতে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার ওপর এখন প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান নির্ভর করছে। প্রতি শ্রমিকের সংসারে স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ জন সদস্য থাকলে দেড় লাখ লোকের রুটি রোজগারের উৎস এখন ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা। এ যানটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শতাধিক ওয়ার্কশপ, পার্টস’র দোকান, গ্যারেজ ইত্যাদি। এ রিক্সার ওপর ভিত্তি করে যখন মালিক শ্রমিক সহ অন্যান্যরা পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো ভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে ঠিক তখনই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে রিকশা কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও হয়রানী শুরু হয়েছে। তথ্য মতে, ২০১৬ সালে হাইকোর্ট ব্যাটরী চালিত অটোরিক্সা বন্ধের ওপর রুল জারি করে। বিষয়টি কর্মজীবী অটো চালক মালিকদের গভীর হতাশা আর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়ায়। হাইকোর্টের রুলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয়। এদিকে “বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অটোরিক্সা” এমন খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো নগরী। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অটো শ্রমিকদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে। লাখো শ্রমিকের সমাবেশে সেদিন থেকেই শুরু হয় অটো চালক মালিকদের সংগ্রামী পথ চলা। ২০১৬-১৭ সালে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। তবে হয়রারি আর নির্যাতন কখনোই অসহায় অটো শ্রমিকদের পিছু ছাড়েনি। ২০১৭-১৮ সালের জন্যও নবায়ন করা হয় অটোর লাইসেন্স। পাশাপাশি ধড়পাকরও চলতে থাকে। ইতোপূর্বে যানজট নিরসনের নামে নগরীর প্রধান আয়ের সড়ক গুলোতে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যা লাইসেন্স’র অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়। একটি মহল গ্যাস চালিত সিএনজি ব্যবসা চাঙ্গা করতে মেতে উঠেছে ষড়যন্ত্রে। নীল নকশার অংশ হিসেবে চূড়ান্তভাবে অটোরিক্সা বন্ধের মিশনে নেমেছে বলে দাবী ব্যাটারী চালিত রিক্সা শ্রমিক মালিক সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের। একাধিক অটো চালক মালিক জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে, কেউ জমি বিক্রি করে একটি অটো কিনে সংসার চালাচ্ছে। আজ অটো বন্ধ হলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। সচেতন মহলের অভিমত, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ করা হলে চুরি, ছিনাতাই সহ নানা সামাজিক অপরাধ বেড়ে যাবে। এদিকে গতকাল বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া ব্যাটারী চালিত রিক্সা উচ্ছেদ না করার দাবীতে নগরীতে মানব বন্ধন করেছে ব্যাটারী চালিত রিক্সা শ্রমিক-মালিক সংগ্রাম কমিটি। বেলা ১১ টায় নগরীর অশ্বিনীকুমার হলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়। এ সময় কমিটির সভাপতি শাজাহান মিস্ত্রির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ৫ বছর ধরে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারী চালিত রিক্সার লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া অটো উচ্ছেদ না করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে অটোর লাইসেন্স দেওয়ার এবং শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শ্রমিকরা। মিছিলটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে নগর ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিসিসি মেয়র বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেত কর্মীরা। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক রুস্তম হাওলাদার, জেলা ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক নিলিমা জাহান, ইমরান হাবীব রুমন, মহসীন মীর, দুলাল মল্লিক প্রমূখ।