বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধসহ স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে টানা ২০ দিনের আন্দোলন শেষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রনি বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি রোধসহ সারাদেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বরিশালের ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে কর্মসূচির মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর একাধিকবার হামলা ও লাঠিচার্জ হয়েছে। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি জানান, আমরা প্রথমে টাউনহল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করি। পরে শেবাচিম হাসপাতালের সামনে ১০ দিন অবস্থান করলেও প্রশাসন কোনো সাড়া দেয়নি।
এরপর নথুল্লাবাদে ব্লকেড কর্মসূচি দিলে সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে কর্তৃপক্ষ কিছুটা সাড়া দেয়। তবে তখনই আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন কৌশলে হামলা শুরু করে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
রনি বলেন, এই হামলার ধারাবাহিকতায় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে অনশনে বসে। ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে আমাদের দাবি অযৌক্তিক বলেন।
এরপরই তার উসকানিতে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী, নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য ও রাজনৈতিক মহলের মদদে মব তৈরি করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, হামলার ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গেলে হামলাকারীরা উল্টো আমাদের নামে মামলা দিতে থানায় যায়।
মামলার ১ নম্বর সাক্ষী সাইফুল ইসলাম পারভেজ, যিনি শেবাচিম হাসপাতালের স্টাফ এবং বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের অনুসারী। অন্যান্য সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছে ১১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
রনি আরও বলেন, হাসপাতালের কিছু স্টাফ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকেরা মিলে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা পাল্টা কোনো হামলা করেনি, এমনকি গালিও দেয়নি।
তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পক্ষে লড়াই সম্ভব নয়। আমরা রাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছিলাম, তাই আন্দোলনে নেমেছি।
অথচ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর রাতের আঁধারে হামলাকারীরা খিচুড়ি পার্টি করেছে। এটি ছিল নিষিদ্ধ স্বৈরাচারদের সংস্কৃতি, যা আমরা আগেও দেখেছি।
রনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির উসকানিতে, হাসপাতাল পরিচালকের জড়িত থাকার প্রমাণসহ আমরা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার চাই। আমরা কাউকে ভয় পাই না-একজনকে মারলে দুজন দাঁড়াবে, দুইজনকে মারলে ১০ জন দাঁড়াবে।
ছাত্ররা মার খেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছে, তবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
এ আন্দোলনের ওপর চালানো প্রতিটি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে রোববার (১৭ আগস্ট) টাউনহল থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হবে বলেও উল্লেখ করেন রনি।