এরই মধ্যে একজন পরিচিত লোক বাসায় গিয়ে জানায় হাবিবুল্লাহ গুলিবিদ্ধ রাস্তায় পড়ে আছে। পরে তার মোবাইলে কল দিলে একজন অপরিচিত লোক ফোন রিসিভ করে জানান, সে ঢাকা মেডিকেলে আছে। পরে তারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখেন সে মারা গেছে। দুই দিন পর্যন্ত তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ফেলে রাখা হয়। তাদেরকে দেওয়া হয় নাই। অনেক কষ্ট করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ২৩ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ বুঝে নেয় পরিবার। আশা ছিল হাবিবুল্লাহর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করবেন। কিন্তু হাসপাতালের লোকজনের কারণে অ্যাম্বলেন্স না পেয়ে জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।শহীদ হাবিবুল্লাহ ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের চর মোল্লাজি গ্রামের মৃত শফিউল্লাহর ছেলে।শহীদ মো. হাবিবুল্লাহর ছোট ভাই মো. নুর উদ্দিন নূরু জানান, ২৫ বছর আগে বাবা শফিউল্লাহ মারা যাওয়ার পর অভাবের কারণে তাদের দুই ভাই ও তিন বোনকে নিয়ে মা আছিয়া খাতুন ঢাকায় চলে যান। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে তাদের ভাই-বোনদের বড় করেছেন। তিন বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা দুই ভাইও বড় হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ভাই হাবিবুল্লাহ প্রথমে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। পরে সিএনজি চালাতেন। সর্বশেষ রেন্ট কারের চালক হিসেবে কাজে যোগ দেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার।
ছেলে মো. রিয়াদ হোসেন (১৮) ঢাকায় একটি মাদ্রাসা থেকে হেফজ শেষ করেছেন। বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার (২১) মুগদা কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন, মেজো মেয়ে হাবিবা (৭) বাসার পাশের একটি মাদ্রসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে এবং ছোট মেয়ে হুমায়রার বয়স দুই বছর। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শনির আখড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
২০২২ সালে মা আছিয়া খাতুন মারা যান। মা-বাবা দুইজন মারা যাওয়ায় গ্রামের যাওয়া একেবারে ছেড়েই দিয়েছেন। এরই মধ্যে বাড়ির লোকজন তাদের পৈতৃক জমিও দখল করে নিয়েছেন। এ সকল কারণে গ্রামে যাওয়ার কোনো আগ্রহ ছিল না তাদের মধ্যে।
হাবিবুল্লাহর ছোট ভাই আরও জানান, হাবিবুল্লাহ মারা যাওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলের লোকজন তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। কিছু বললেই হাসপাতালের লোহজন বলতেন উপরের নির্দেশ। তাদের অপচিকিৎসার কারণেই হাবিবুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন নুর উদ্দিন।
এদিকে হাবিবুল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে হাফেজ মো. রিয়াদ হোসেন সংসারের খরচ জোগাতে পড়ালেখা ছেড়ে একটি এমএস স্টিল কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। বাবার অবর্তমানে পরিবারের বোঝা এখন তার কাঁধে। বোনদের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই পরিরের যে কোনো একজনকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি করেন তারা।