নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শেবাচিম হাসপাতালে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের রুখতে না পারায় চিকিৎসা কার্যক্রমে চলমান নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছেনা পরিচালক। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগও রয়েছে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রনে। অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেেছ, কর্মবিরতি আর ক্ষমতাসীন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ‘শিক্ষানবিস চিকিৎসক শৃঙ্খলা আইন’ বাস্তবায়ন না হওয়াসহ চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত রোগী ও রোগীর ভিজিটর এবং জেষ্ঠ্য চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি লাগামহীন করে তুলেছে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের। এনিয়ে ইন্টার্নি ডক্টরস এসোসিয়েশন সভাপতি সেই পুরানো বুলি আওড়িয়ে জানান দিলো ডাক্তারদের মর্যদাতো বুঝতে হবে। হাসপাতালে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের নৈরাজ্য রুখে দেয়ার ব্যাপারে পরিচালক বহুল প্রচলিত দাপ্তরিক বাক্য ব্যয়ে জানালো, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অথচ রোগী ও স্বজনদের পিটিয়ে খ্যান্ত না হয়ে বরং বিভিন্ন অভিযোগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে দেয়ার ঘটনা সপ্তাহে প্রায় ২/৩ দিনই ঘটে। এমনকি রোগী ও স্বজনদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে পুরো হাসপাতালজুড়ে রনক্ষেত্র তৈরী হয় । এহেন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশকেও দিনভর ব্যস্ত সময় পার করতে হয় বলে নগরীর কোতয়ালী পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। দক্ষিন জনপদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাস্থল শেবাচিমে চিকিৎসা কার্যক্রমে ইন্টার্নী চিকিৎসকদের চলমান নৈরাজ্যে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে তৈরী হয়েছে একধরনের আতংক। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইন্টার্নী চিকিৎসকদের সংঘবদ্ধ মারামারিতে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে গরীব অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনুসন্ধানে চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডগুলোর একাধিক রোগী ও স্বজনরা জানায়, অতিরিক্ত রোগী ও স্বজনদের ঠেলাঠেলির কারনে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে শিক্ষানবিস চিকিৎসক রিফাতের গায়ে ধাক্কা লাগে এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজন আলামিনকে থাপ্পর মারে। ঘটনার একপর্যায়ে ঐ শিক্ষানবিস অন্যাদের ফোন করে দল পাকিয়ে আলামিনকে কক্ষে আটকে রেখে পালাক্রমে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। সংঘবদ্ধ আক্রমনের শিকার ঐ স্বজনকে বাচাতে তার মা গেলেও মারধর করা হয়। এহেন কর্মকান্ডের পর পরিস্থিতি বাগে নিতে উল্টো হাসপাতালে মিছিল বের করে সুচতুর শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় হাসপাতাল জুড়ে রোগী ও স্বজনদের মাঝে আতংক বিরাজ করায় অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে বাইরের হাসপাতালে চলে যায়। একপর্যায়ে পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শেষে পরিচালকের আশ্বাসের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রমের প্রায় চার ঘন্টার অচলাবস্থা নিরসন হয়। কিন্তু এ নৈরাজ্য হাসপাতালে এখন নিত্য দিনের চিত্র। গতমাসে একই ঘটনায় এক প্রসুতির পেটে লাথি মারে এক শিক্ষানবিস চিকিৎসক এবং এর আগের মাসে এক শিক্ষানবিস চিকিৎসককে স্যার না বলায় বাবার লাশের সামনে পুত্রকে পেটায় এ চিকিৎসকরা। চলতি বছরে শেবাচিম হাসপাতালে এ ধরণের অত্যন্ত ডজন খানেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাসপালের পরিচালক কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি। তবে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে পরিচালক ডাঃ মোস্তাফিজুর বলেন, এধরণের ঘটনার অবসান করতে অনুসন্ধানগুলোর মধ্যে রোগীর সাথে অতিরিক্ত ভিজিটর, ওয়ার্ড গুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী থাকাসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পোশাক না পড়ার প্রবণতাকেই দায়ী করলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, রোগী ও স্বজনরা চিকিৎসকদের চিনতে না পারায় যথাযথ আচরণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা হাসপাতালের গেটে আনসার সদস্য দিয়ে চেকপোস্টের মাধ্যমে ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করবো এবং রোগী প্রতি একজনের বেশি ভিজিটর হাসপাতালে থাকতে দেয়া হবে না। অতিরিক্ত ভিজিটর চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত করার সাথে সাথে তৈরী করে বিশৃঙ্খলা। তিনি আরো বলেন, একইসাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য লকবুক অনুযায়ী আচরণবিধি বাস্তবায়ন করা হবে। যেখানে থাকবে শৃঙ্খলা কমিটি তাদের আচরনবিধি নিয়ন্ত্রনের জন্য। এদিকে আইডিএ সভাপতি ডা: রাজু বলেন রোগী ও স্বজনদের আপত্তিকর আচরন বহুলাংশে দায়ি এ পরিস্থিতির জন্য। তবে হাসপাতাল কিছু পদক্ষেপ না নেয়ায় এ সমস্যা কাটছেনা। কিন্তু রোগীর প্রতি খারাপ আচারনের জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যে সমস্যা তেরী করে তার কোন সদুত্তর মেলেনি। উল্লেখ্য শেবাচিম হাসপাতাল হাজার শয্যার হলেও দৈনিক প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকে।