এস এন পলাশ ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসার স্থান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বৃহৎ এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যহ হাজার হাজার মানুষ আসেন চিকিৎসা গ্রহন করতে। সরকারের নির্দেশ রয়েছে সর্বস্তরের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার। কিন্তু নিশ্চিত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশ্নে সোনার হরিণ। সমস্যা আর আশ্বাস নিয়ে দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানটি চলছে গতানুগতিক রীতিতে। খোদ হাসপাতালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র আছে যে গুলো চিকিৎসা সেবার নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এমনকি রোগীদের নূন্যতম চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হয়। আর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে শুধু সান্তনার বাণী শুনান। হাসপাতালের বিরুদ্ধে রয়েছে অবহেলায় রোগী মৃত্যুর বিস্তর অভিযোগ। রোগীদের ভাষ্যমতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী মারা যায় চিকিৎসকের অবহেলায় আর প্রতিবাদ করে স্বজন যায় কাঠগড়ায়। বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধকতা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু দুর্বলতা সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সংকটের কারণে অর্ধেকের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতে। বিশেষ করে মহিলা, মেডিসিন, সার্জারি ও লেবার ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই করুণ। লেবার ওয়াডের্র বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে প্রসূতি রোগীদের। হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী থাকছেন ১২শ এর মতো। ফলে অনেক বৃত্তবান রোগী এখানে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ছুটে যান রাজধানীতে। এছাড়া চিকিৎসা খরচের অভাবে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার গরীব রোগী। রোগীরা শত অনুনয় বিনয় করলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনা ওয়ার্ডে। তাদের সাক্ষাত পেতে হলে ৪ থেকে ৫ শ টাকা ব্যয় করে যেতে হবে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে। যদি কখনো ভাগ্যক্রমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওয়ার্ড পরিদর্শনে যান তবে রোগী দেখার নামে চলে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর মহড়া। ওয়ার্ডে রোগীদের কাতরানী গোঙানীর শব্দ কানে যায়না নার্সদের। কাঁচ ঘেরা কক্ষে তারা মশগুল থাকেন গল্পে ও পারিবারিক আলাপচারিতায়। এমনই অভিযোগ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের। কিডনি বিভাগে রোগীদের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। ২০০১ সালে কিডনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবুল কাশেম বদলি হয়ে যাওয়ার পর নতুন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না আসায় বন্ধ হয়ে যায় কিডনি ইউনিট। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ডায়ালাইসিস মেশিন ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাসপাতালের ৩য় তলায় ৮/১০ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ডায়ালাইসিস ইউনিটও তৈরি করা হয়। কিন্তু ইউনিটটি চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ের আজো ন্যাফলোজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা জনবল নিয়োগ দেয়নি। ফলে সরবরাহ করা মেশিন দু’টি প্যাকেট বন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মানসিক বিভাগ একজন সহকারী রেজিস্ট্রার পদের চিকিৎসক দিয়ে চলছে মানসিক রোগীদের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডের চিকিৎসা। ২০০৪ সালে প্রফেসর ডা. সরোজ কুমার দাস বদলি হয়ে যাওয়ার পর ডাঃ তপন কুমার একাই সব রোগীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকার কারনে মানুষিক রোগীদের ভর্তি দেয়া হয় মেডিসিন বিভাগে। এর ফলে অনেক সময়ে মেডিসিন বিভাগে ঘটে নানা বিপত্তি। এ ছাড়া মানসিক বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। মানসিক বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিরাপত্তার অভাবে গত এক বছরে এ ইউনিট থেকে কমপক্ষে ১০ রোগী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপশি এখানকার চিকিৎসা সেবায় মানসিক রোগী পুরোপুরি ভাল হয়েছে এমন নজির নেই। তবে বর্তমান পরিচালক যোগদান করার পরে হাসপাতালের কিছু চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। প্রসূতি বিভাগের বাহিরের বারান্দা রোগীর চিকিৎসা নেয়ার উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বেড বসানো হয়েছে। এতে করে রোগীর ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে। এ ছাড়াও অন্যন্ন বিভাগেও কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার শুরু করা হয়েছে পরিত্যাক্ত নতুন ভবনের কাজ। এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচলক ডাঃ আব্দুল বাকির বলেন, হাসপাতালে অনেক সমস্যা আছে। ধিরে ধিরে সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করতে আছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে চিকিৎসক না দিলে আমার কিছু করার নেই। আমি বার বার চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি।