• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মামলার কারণে বেসামাল বরিশালের ৬৩ বিদ্যালয়

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ২০:৪৩ অপরাহ্ণ
মামলার কারণে বেসামাল বরিশালের ৬৩ বিদ্যালয়

মামলার কারণে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ৬৩ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। নেমে যাচ্ছে লেখাপড়ার মান। মামলার ফাইল নিয়ে আদালতে ছুটতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। শিক্ষাবোর্ডকেও সামলাতে হচ্ছে অহেতুক হ্যাপা। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, কমিটির বিরোধ ও শিক্ষক বহিষ্কারসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষক ও স্থানীয়দের দায়ের করা ৬৩টি মামলার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে এসব মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিদর্শক (বিদ্যালয় শাখা) মো. জামাল উদ্দিন জানান, বরিশাল বোর্ডের অধীনে ৬ জেলায় ১ হাজার ৮০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি বিদ্যালয়ের ৮৮টি মামলা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ১৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া ৩টি মামলা খারিজ হয়েছে ও ২টির রুল পেন্ডিং রয়েছে। অবশিষ্ট ৬৪টি মামলা উচ্চ আদালতে চলমান। ৬৩টি মামলার মধ্যে বরিশাল জেলার ২৪টি বিদ্যালয়, ঝালকাঠির ১১টি, পিরোজপুরের ১৩টি, পটুয়াখালীর ১২টি, রবগুনার ১১টি, ভোলা জেলায় ১৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৪টি বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড মামলা করেছে। বোর্ডের এসব মামলার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়গুলো রিট করেছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় প্রভাব ও রাজনৈতিক দলাদলির কারণে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে কে আসবেন, আর কে আসতে পারেন না, তা নিয়ে মূলত বিরোধ হয়। এ ছাড়া বিরোধের জেরে বেশির ভাগ সময় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতাদের বাদ দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রধান শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রভাবশালী মহল গোপনে বিদ্যালয় কমিটি গঠন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপরপক্ষ কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে কমিটি গঠন করেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে প্রধান শিক্ষকদের বহিষ্কার করা হয়। এসব কারণেও মামলা হচ্ছে।

উপ-পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন আরো জানান, সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয় ও কলেজের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলা খারিজ হওয়ার কথা। আর নিম্ন আদালতে হওয়া মামলাগুলোর দায় বোর্ডের ওপর থাকে না। তাই মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থাও বোর্ডের সংগ্রহে নেই।

এ কে (আসমত আলী খান) স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসিম উদ্দীন বলেন, কমিটি বিরোধ কিংবা সভাপতির বিরাগভাজন হলেই প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয় অথবা কমিটির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মামলা ঠুকে দেন। এর ফলে প্রধান শিক্ষককে মামলার পেছনে দৌড়াতে হয়। বিগত কমিটি তার বিরোধিতা করায় তাকে চার বছর বহিষ্কৃত অবস্থায় থাকতে হয়েছে এমন কি মািরুধ হয় তার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, স্কুলের সম্পদ ও আয়ের কারণে কমিটির ক্ষমতার লড়াই বেড়েছে। সাবেক সভাপতি দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি বাধা দিলে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনায় স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫০ থেকে নেমে এসেছে সাড়ে ৪৫০ জনে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী বলেন, বিরোধ ও মামলার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে অসন্তোষ। এক কথায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবার মামলা চালাতে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে অর্থসংকটে পড়ে বিদ্যালয়গুলো। ফলে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে এসব বিরোধ ও মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নেয়া হবে।