• ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভূমি দখলের পাঁয়তারাসহ রাজনগরের লোকেশ শব্দকরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ১৯:০৯ অপরাহ্ণ
ভূমি দখলের পাঁয়তারাসহ রাজনগরের লোকেশ শব্দকরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার: মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকেশ শব্দকরের বিরুদ্ধে ভূমি দখল করার পাঁয়তারাসহ নানান অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ৬নং টেংরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা লোকেশ শব্দকর কতৃক নিজ জ্যাঠাতো (চাচাত) বোন বিনোদনী শব্দকরের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য প্রায় ৩ একর জমি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য জমি দখল করে বৃদ্ধ মা মাতংগিনী শব্দকর (৯০)কে বাড়ি থেকে বের করে দেন লোকেশ শব্দ কর ও তার পরিবারের লোকজন, এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিনোদিনী শব্দ ও তার মা মাতংগিনী শব্দকর এবং নাতি প্রদীপ মোহন কর।
মাতংগিনী শব্দকরের মেয়ে বিনোদিনী শব্দকরের  জামাতা মৌলভীবাজার  জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের জারী কারক দিপু মোহন কর ২০১৪ ইং সালের ২৮ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
দিপু মোহন করের মৃত্যুর পর অভিযুক্ত লোকেশ শব্দকরের জেঠী মা (বড় চাচী) ও তার মেয়ে  বিনোদনী শব্দ করকে এখানে তোমাদের কোন সম্পদ নেই বলে হুমকি ধমকী দিয়ে লোকেশ শব্দকর বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এছাড়া এর পূর্বে মাতংগিনী শব্দকরের নাতি প্রদীপ মোহন কর জায়গা জমি নিয়ে কথা বলায় তাকে ২০১৭ইং সালে বাড়ি থেকে বের করে দেন লোকেশ শব্দকর ও তার পরিবারের লোকজন।
এরই সূত্র ধরে পর্যায়ক্রমে বিনোদনী শব্দকর ও মাতংগিনী শব্দকরকে ২০২০ইং সালে বাড়ি থেকে  বের করে দেয়া হয়। এরপর তারা প্রদীপ মোহন কর এর ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন।
পিতার মৃত্যুর পর প্রদীপ মোহন কর আউটসোর্সিং এ জারী কারক হিসেবে ২০১৪ ইং সাল থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যালে ২০২০ইং সাল পর্যন্ত চাকরি করে আসছিলেন। হঠাৎ অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তার চাকুরী চলে যায় বলে জানায় প্রদীপ মোহন কর।
এরই মধ্যে প্রদীপ তার মা ও দাদীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় আপোষ মিমাংসা করার উদ্দেশ্যে ৬নং টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খানের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। স্থানীয় ভাবে বেশ কয়েকবার বিচার শালিস হলেও লোকেশ শব্দকর বিচার বৈঠকের তোয়াক্কা না করে জমি যাতে সহজে না দেয়া লাগে এহেন উদ্দেশ্যে ২০২২ইং সালের জুলাই মাসের ১৭ তারিখে রাজনগর সহকারী জজ আদালতে লোকেশ শব্দকর বাদী হয়ে মাতঙ্গিনী কর গং দিয়ে একটি স্বত্ব মোকদ্দমা দায়ের করেন। মোকদ্দমা  মামলা  নং ৮১/২০২২ইং।
মায়ের উত্তরাধিকারী ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্য কথায় বলায় প্রদীপ মোহন করের উপর লোকেশ শব্দকরের ২ছেলে তাপস ও স্বপনসহ কয়েকজন মিলে রাজনগরে টেংরা ইউনিয়নের নজির মিয়ার বাড়ির সামনে  প্রদীপের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় এবং কোন মামলা কিংবা আর কথা বললে তুইসহ সবাইকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে বলে  হুমকি ধমকী দিয়ে চলে যায়।
নজির মিয়ার মাধ্যমে প্রদীপের মা খবর পেয়ে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কয়েকজন সাক্ষীর সহযোগিতায় রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে প্রদীপ মোহন করকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।
চিকিৎসা শেষ বাড়ি ফিরে প্রদীপ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলী আদালত রাজনগর মৌলভীবাজারে মামলা নং ৪৬/২০২৩, (রাজ) দায়ের করেন যা এখনো চলমান রয়েছে।
এছাড়া মৃত দিপু মোহন কর দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পেনশনের টাকা উত্তোলন ও  তার ছেলেকে স্থায়ী চাকরীর ব্যবস্থা করে দিবেন বলে ৬ লক্ষ টাকা নেন বলে অভিযোগ করেন প্রদীপ মোহন করের মা বিনোদিনী শব্দকর।
এব্যাপারে বিনোদনী শব্দকরের কাছে কোন প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন দালিলিক প্রমাণ নেই শুধু মাত্র বিশ্বাস করে নগদ ৬ লক্ষ টাকা দিই আমার চাকরি স্থায়ী করার জন্য।
এরপর প্রদীপের চাকরী স্থায়ী না করে দিয়ে উল্টো ২০২০ইং সালে প্রদীপের অস্থায়ী চাকরি চলে গেলে প্রদীপের মা বিনোদিনী শব্দনকর লোকেশ শব্দকরের কাছে টাকা ফেরত চাইলে লোকেশ শব্দকর টাকা নেয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন বলে জানান বিনোদিনী শব্দকর।
এব্যাপারে লোকেশ শব্দকরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দিপু মোহন কর মারা যাওয়ায় আমি প্রদীপ মোহন করকে আউটসোর্সিং এ জারী কারক হিসেবে ২০১৪ ইং সাল অস্থায়ী ভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যাল মৌলভীবাজারে ব্যবস্থা করে দেই। দিপু মোহন কর মারা যাওয়ায় পর তার স্ত্রী বিনোদনী শব্দকর ও প্রদীপ মোহন কর সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে  ও আমার জেঠী মা (বড় চাচী) মাতংগিনী শব্দকরকে ফুসলিয়ে  আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করাচ্ছে।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, প্রদীপের জন্যই আমাদের পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আমি বা আমার পরিবার কেউই তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেইনি এবং মারধরের বিষয় এসব কিছু মিথ্যা। আমি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এরা সবাই মিলে আমার সম্মান নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এগুলো সব মিথ্যা।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রদীপ মোহন কর ৫টি মামলা করেছিল তার মধ্যে ৪টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে শুধুমাত্র ১টি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে চেয়ারম্যান টিপু খান, এনাম মেম্বার, দেব প্রথ (দেবু), আমার আরেক বোন নিয়তী শব্দটকর ও এলাকার লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করে সত্য বিষয় জানতে পারবেন।
উক্ত বিষয়ে ৬ নং টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খানের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করলে তিনি রিসিভ না করায় উনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এনাম মেম্বারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রদীপ নেশা গ্রস্ত ছেলে আমি নিজে শুনেছি দেখেছি। এগুলো তাদের যৌথ সম্পদ, লোকেশ শব্দকর একজন ভাল লোক, অযথা এসব মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে।
এবিষয়ে বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠক হয়েছে কিন্তু তারা মানে না বলে উঠে যায়। তাই এই বিষয়টি সমাধান হয়নি। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা হয়েছে এবিষয়ে আমরা আবার খুব শীঘ্রই বসে সমাধান করবো বলে তিনি জানান।
উক্ত বিষয়ে লোকেশ শব্দকরের বোন নিয়তি রানীর ছেলে গোবিন্দ চন্দ্র করের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা তো আমার বাবার বাড়ি কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারে থাকি। যার কারনে, তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তা জানিনা। শুধু জানি তারা বাড়িতে নেই আর ৬ লক্ষ টাকার লেনদেন তারা করেছে কি না জানিনা তবে শুনেছি লেনদন হয়েছে।
এই জায়গায় আমার মায়ের অগ্রাধিকার অনুযায়ী দাবী আছে। আমরা জায়গা পাই অবশ্যই আমরা আমাদের প্রাপ্য জায়গা জমি চাই। আমার মামা লোকেশ শব্দকর আমাদের বুঝিয়েছেন যে, আমি বাটোয়ারা মামলা করেছি, যাতে সবাই তার প্রাপ্য সম্পদ পায়।
এব্যাপারে, উক্ত বিষয়ে অবগত লকুছ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার শালিস হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম, শালিসে সমাধানের কথা হলেও পরে লোকেশ বাবু পরে আর মানেন না।
এটা সত্য যে, তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন লোকেশ বাবু। আর ৬ লক্ষ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন হ্যাঁ লেনদেন দেখিনি তবে দিপু মোহন করের স্ত্রী প্রদীপের মা বিনোদিনী শব্দ কর কয়েকবারই শালিসে টাকার কথা বলেছেন।
শালিসে উপস্থিত থাকা বিশ্বজিৎ করের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সব সত্য ঘটনা মিথ্যা বলার আমার কোন প্রয়োজন নাই। লোকেশ বাবু তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এখন তারা অসহায় অবস্থায় ভাড়া করা ঘরে থাকে, নিজেদের জায়গা ঘর থাকার পরও। আদালতে বড় পদে চাকরি করায় লোকেশ বাবু এসব বিচার বৈঠক তোয়াক্কা করেন ন্ ক্ষমতার বলে।
এব্যাপারে উক্ত এলাকার জমিদার বংশের বিচার বৈঠকে উপস্থিত থাকা দেব প্রথ (দেবু) বাবুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, লোকেশ বাবু ও জেঠাতো বোন বিনোদিনী করের পরিবারের বিষয় অনেকবারই শালিস বৈঠক হয়েছে। এখানে মাতংগিনী শব্দকরের জায়গা রয়েছে। তারা অবশ্যই পাবে। কেননা, এগুলো তাদের প্রাপ্য সম্পদ। এখন তারা বাড়ি থেকেও ঘর ভাড়া করে থাকে। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলে্ হ্যাঁ শুনেছি বের করে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কোন শালিস বৈঠক হয়নি তারা উভয় পক্ষ মামলা মোকদ্দমায় চলে যায়। এখনো এগুলো সমাধান হয়নি। খুব দুঃখজনক বিষয়, স্বামীর ভিটা বাড়ি থাকা সত্বেও বৃদ্ধ মাতংগিনী শব্দকরসহ পরিবারের লোকজন আশ্রয়হীন।
লোকেশ শব্দকর বলেন, আমি বেশ কয়েকবার আমার জেষ্ঠ্য মা (বড় কাকী) মাতংগিনী শব্দকরকে  হাতে পায়ে ধরে বলেছি, উনার মেয়ে বিনোদিনীকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কিন্তু প্রদীপ উনাকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে যেতে দেয় না।
এব্যাপারে মাতংগিনী শব্দকরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, লোকেশ আমার স্বামীর বাড়ি থেকে আমার মেয়েসহ বের করে দিয়েছে। এর আগে আমার নাতি প্রদীপকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি।
আমাদের যখন নিজের ঘর থেকে বের করে দিল, আমার নাতি দিন মজুরিতে কাজ করে ঘর ভাড়া করে আমাদের রেখেছে। এজন্য লোকেশ তার ছেলেদের নিয়ে আমার নাতিকে অনেক মারধোর করেছে, মাথা ফাটিয়েছ্ কত রক্ত যে ঝরিয়েছে বলে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাতংগিনী।