স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী : সেতু ভাঙা থাকায় বেতাগী পৌর শহরের বড় বাজার থেকে ভারি কোনো মালামাল আনতে পারি না। মোগো দুইখো যাইবে না কোন কালে।’ এভাবে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা সর্ত্তোদ্ধ সুলতান আহমেদ। সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার গড়িয়াবুনিয়া বাজার সংলগ্ন ভোলারদোল খালের ওপর নির্মিত সেতুটি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয়রা কোনোরকমে চলাচল উপযোগী করে রেখেছে। সেতুটির ভেঙে যাওয়া অংশে দুর্ঘটনা এড়াতে কাঠের তক্তা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। অন্য অংশে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, আটোরিকশা ও পথচারীরা হেঁটে চলাচল করছে। রিকশা ও অটোরিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে সাবধানে পার হচ্ছে চালক। ভাঙা অংশে কাঠের তক্তা দিয়ে ভারি কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। সেতু সংলগ্ন গড়িয়াবুনিয়া বাজার। স্থানীয় দোকানদারদের পন্যসামগ্রী ও বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিতে জনসাধারণের ৫ কি মি ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে । এতে স্থানীয় দোকানদারদের এবং জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে।
পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গড়িয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এ সেতু দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া ডিসিরহাট হাট, দেশান্তরকাঠী, তালগাছিয়া, গড়িয়াবুনিয়া, পুটিয়াখালীসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী এলাকায় এবং আ লিক সড়কে যাতায়াতে এ সেতু ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, তাদের উপজেলা শহর বেতাগীতেও যাতায়াত করতে হয় এ সেতু দিয়েই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ উদ্দিন গাজী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যাতায়াতে প্রতিদিনই বিভিন্ন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতের উপযোগী না হওয়ায় তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। অতি দ্রুত নতুন সেতু নির্মান বা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের গড়িয়াবুনিয়া বাজার এলাকায় ভোলারদোল খালের ওপর ২০০১ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থ লোহার সেতুটি নির্মিত হয়। নির্মাণের প্রায় দুই যুগ অতিবাহিত হলেও সংস্কার করা হয়নি।
সেতু সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পরিমল চন্দ্র ঘরামী বলেন, ‘সেতুটি মাঝের অংশ ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদের মুখে এই এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কারণ এটির ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে তাদের। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।’ সেতু সংলগ্ন গড়িয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার জানায়,‘ সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় অনেক ভয়ভয় করে।’
বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নওয়াব হোসেন নয়ন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি সেতুটি দ্রুত সংস্কারের। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানালেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ সেতুটি নির্মাণের ইতোমধ্যে নকঁশা করে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ এলে কাজ শুরু করা হবে।