• ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বেতাগীতে সিআইপিআরবি’র ভাসা প্রকল্পের সমাপনী সভা

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ২১:২৭ অপরাহ্ণ
বেতাগীতে সিআইপিআরবি’র ভাসা প্রকল্পের সমাপনী সভা

স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী॥ সরকারি প্রকল্পে হস্তান্তরের মাধ্যমে সমাপ্ত হচ্ছে ভাসা প্রকল্পের কার্যক্রম
ভাসা-২ প্রকল্প, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। বরিবার (২২ ডিসেম্বর ২০২৪) এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পরিচালিত ভাসা প্রকল্পের সমাপনী সভা।

বেতাগী উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায় বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী’র সভাপতিত্বে এবং এরিয়া অডিনেটর রজত সেনের সঞ্চালনায় করেন। সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, ভাসা প্রকল্প শিশুদের সুরক্ষায় একটি মহতী উদ্যোগ।

এর মাধ্যমে বেতাগী এলাকার সাধারণ জনগণ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সচেতন হয়েছে। আঁচল বা শিশুযত্ন কেন্দ্রে শিশুকে রাখার মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবারগুলো বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েরা নিশ্চিন্তে কাজকর্ম করতে পেরেছে।

একইসাথে আঁচলের বিভিন্ন কার্যক্রম শিশুর সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সাঁতার শেখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে সাঁতার জানা ব্যক্তি পানিতে কোনো বিপদে পড়লে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে ও অন্যদের রক্ষা করতে পারে”। বক্তব্যের শেষে তিনি বেতাগী উপজেলার জনগণের পক্ষ থেকে সিআইপিআরবিকে ধন্যবাদ জানান।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইপিআরবি এর উপ-নির্বাহী পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর আমিনুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “পানিতে ডুবা বাংলাদেশের অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

বিশেষ করে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু হার বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রথম দিকে রয়েছে। সিআইপিআরবি তার ২০ বছরের গবেষণায় প্রমাণ করেছে যে, শিশুর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান, সাঁতার শেখানো ও পানি থেকে উদ্ধারের পর তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা- শিশুদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী সামাজিক টিকা। সরকারি উদ্যোগে সারাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্য এই টিকা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা শিশু কর্মকর্তা, সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক, সাপ্তাহিক বিষখালী সম্পাদক আব্দুস সালাম সিদ্দিকী, বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতা মো. কামাল হোসেন খান, প্রেসক্লাবের সদস্য লিটন কুমার ঢালী, নাগরিক ফোরাম এর সভাপতি মো. শামীম শিকদার, ছাত্র প্রতিনিধি মো. ইমরান হোসেন, সজল মাহমুদসহ আরও অনেকে সভায় উপস্থিত থেকে ভাসা প্রকল্প নিয়ে তাদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ভাসা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ভাসা শিশুদের জীবন বাঁচাতে ভাসা প্রকল্পের অবদান উল্লেখ করেন। তারা বলেন যে আঁচল, সুইমসেফ ও ফার্স্ট রেসপন্স প্রশিক্ষণকে অভিভাবক ও কমিউনিটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছেন।

প্রসঙ্গত ২০১৬ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোটস ইনস্টিটিউটিউশন এবং প্রিন্সেস শার্লিন অফ মোনাকো ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায়, বরগুনা জেলার বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় “ভাসা” প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। সরকারী প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় প্রকল্প কার্যক্রম বিস্তার লাভ করেছে। শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু ও ইনজুরি প্রতিরোধ করা-এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

প্রকল্পটির কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে -শিশুযত্ন কেন্দ্র (আঁচল) পরিচালনা, জীবনের জন্য সাঁতার কার্যক্রম (সুইমসেফ) বাস্তবায়ন এবং ফার্স্ট রেসপন্স প্রশিক্ষণ প্রদান। ছয়টি কর্ম এলাকায় বর্তমানে ৫১০টি আঁচল কেন্দ্র রয়েছে। প্রকল্পের সন্তোষজনক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বাংলাদেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ‘‘ইনটিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজ সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার প্রটেকশন এন্ড সুইমসেফ ফেসিলিটি (আইসিবিসি) প্রজেক্ট নামে একই ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সিআইপিআরবি উক্ত প্রকল্পে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। উল্লেখ্য যে, ভাসা প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত আঁচল কেন্দ্রগুলোকে আইসিবিসি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।