• ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

উদাসীনতা ও অবহেলা

বিসিসির সিসি ক্যামেরা কেলেংকারীর তদন্ত শুরু হচ্ছে !

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০০:০২ পূর্বাহ্ণ
বিসিসির সিসি ক্যামেরা কেলেংকারীর তদন্ত শুরু হচ্ছে !

বরিশাল নগরীকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দিতে আড়াই কোটিরও বেশী টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরাগুলো এখন পর্যন্ত নগরবাসীর কোন উপকারে আসেনি। চুরি হয়ে গেছে ৮০টি ক্যামেরাসহ ৪২০টি ক্যামেরার ক্যাবল। বিসিসির উদাসীনতা ও অবহেলাকে এর জন্য দায়ি করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর অধীনে চালু করা হয় ৪২০টি সিসি ক্যামেরা। কোন প্রকার জোড়াতালি দিয়ে এর কার্যক্রম সচল ছিলো একই বছরের জুন মাস পর্যন্ত। এখন রাস্তার পাশের পোস্টগুলোতে দেখা যায় অকার্যকর ক্যামেরাগুলো। এর সব ক্যাবল  চুরি হয়েছে। ৮টি সিসি বুথের সবকটিতে ঝুঁলতে দেখা গেছে  তালা। চুরি হয়েছে ৮০টি ক্যামেরাসহ সব ক্যামেরার ক্যাবল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে অর্থের অভাবে রক্ষণাবেক্ষন না হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে।

বিসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে বিস্তারিত জানতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হবে। কর্পোরেশনের কোন কর্মকর্তা যদি এ বিষয়ক কোন অপরাধে জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিসিসির  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, প্রথম থেকেই এ ক্যামেরাগুলো যেভাবে চালু করার কথা ছিলো সেভাবে চালু হয়নি। কাজ ভালো হয়নি। বর্তমানে একটি ক্যামেরাও চালু নেই। আমরা একটি কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টি দেখবো। মেশিনারিজ যা আছে তাও নতুন করে কাজ করবে কিনা দেখা হবে।  অনিয়ম ও ঘাটতির জন্য এগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। এসব ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী অহিদ মুরাদ বলেন, ২০১৭ সালে এ ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হয়। মূলত এগুলো রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কোন অর্থের বরাদ্দ না থাকায় আমরা সঠিকভাবে দেখভাল করতে পারিনি। এই সুযোগে ৮০টির বেশি ক্যামেরাসহ সব ক্যাবল চুরি হয়ে গেছে। এখন বাকি আছে শুধু পোস্টগুলো।
মূলত বিভিন্নস্থানে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার তা নিয়ন্ত্রনে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল নগরীর ৫৮টি স্পটে  ৪২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।  নগরভবন ও সম্প্রসারিত নগর ভবনসহ নগরীজুড়ে এ ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হলেও ৭০টি ক্যামেরা ছাড়া বাকী সাড়ে ৩শ ক্যামেরা অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিকল হয়ে যায়। সম্প্রতি বিসিসির দুই ভবনে হামলার ঘটনায় বাকিগুলোও অচল হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের মতে এগুলো নগরীর আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ছিলো সহায়ক শক্তি। এটি পুনরায় চালু করতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ।

বিসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, এ ক্যামেরাগুলো নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে স্থাপন করা হয়েছিলো। তখনকার পুলিশ প্রশাসনও এগুলো তাদের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু পরিষদ পরিবর্তনের পর একাজ আর আগায়নি। এগুলো চলমান রাখতে যে সাপোর্ট দরকার ছিলো তাও পরবর্তিতে দেয়া হয়নি। এখন এগুলোকে সচল করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিসিসির সমন্বয় দরকার হবে।
এদিকে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে ২০২১ সালের ২৭ জুন থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ মহানগরীতে স্থাপন করেছে প্রায় সাড়ে ৪০০ সিসি ক্যামেরা । কিন্তু যেসব স্থানে বিসিসির ক্যামেরা রয়েছে সেখানে স্থাপন করা হয়নি পুলিশের ক্যামেরা। পুলিশের বক্তব্য হলো বিসিসির ক্যাবল থেকে লিংক পেলে এসব এলাকাও পুলিশ মনিটরিং এর আওতায় আনা যেতো। কিন্তু বিসিসি তাদের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখায়নি।
বিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, বিসিসির সিসি লিংক পেলে আমাদের জন্য আরো বেশি সুবিধা হতো। এ বিষয়ে বিসিসির সাথে কথা বললে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এ অবস্থায় আমাদের কিছুই করার নেই। তবে বিএমপির নিজস্ব সিসি ক্যামেরা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ঠ, এগুলো ভালো কাজ করছে।
এদিকে যে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগরের সময়ে নিরাপত্তার দলিল এসব ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষ বিসিসির উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। তাদের মতে পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এদের একজন বলেন, বিসিসি শুধু নিতে জানে দিতে জানে না। ন্যূনতম সুযোগ সুবিধাও আমরা পাচ্ছি না। ক্যামেরাগুলো রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ তারা নেয়নি। যার ফলে সিটি এলাকায় অপরাধ বেড়েছে।
অপরজনের মন্তব্য, কেন ক্যামেরাগুলোর এ হাল হলো একজন নাগরিক হিসেবে তা জানার আমাদের অধিকার আছে। বিসিসির উচিৎ ছিলো চুরির ঘটনা পুলিশকে লিখিত জানানো এবং প্রশাসনের মাধ্যমে এর সত্যতা উদঘাটন। কারণ আমাদের ট্যাক্সের টাকায় এগুলো কেনা হয়েছিলো। আমরা এর তদন্ত চাই।