বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বেতাল গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সূর্য পূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী সূর্যমনি মেলা। বরিশাল জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ,যাত্রাপালার আড়ালে চলছে নগ্ন ও অশ্লীল নৃত্য, যা দেখতে প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর-তরুণসহ নানা বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, মেলার আয়োজকরা প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে রাতভর এই অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ যাতে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে না পারে, সে জন্য মেলায় নিরাপত্তার নামে বিশেষ লোক নিযুক্ত করা হয়েছে যেকারনে কেউ এই দৃশ্য ধারণ করতে না পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেলার শুরু থেকেই যাত্রাপালার আড়ালে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশিত হচ্ছে। যাত্রার নামে এসব নগ্ন নৃত্য রাত গভীর পর্যন্ত চলতে থাকায় যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অনেকে জানিয়েছেন, এ ধরনের আয়োজনের ফলে এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। তারা আরও অভিযোগ করেন প্রশাসনকে বারবার জানালেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে যাত্রাপালার আয়োজক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
যাত্রাপালার আয়োজকরা দাবি করেছেন, তারা এবারের আয়োজনে সরাসরি জড়িত নন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, আড়াল থেকে আয়োজকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোস্তফা জানান, যাত্রাপালার অনুমতি রয়েছে, তবে অশ্লীল নৃত্যের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বায়েজিদুর রহমান মুঠোফোনে জানান, মেলা মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেলা কমিটির দাবি যে সকলকে ম্যানেজ করা হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে আপনারাও ম্যানেজ হয়ে যান। তিনি আরো বলেন, নিয়ম বহির্ভূত কোন কিছু দেখলে আমাদের জানবেন আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এবিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্যের সুযোগ নেই এবং তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে অশ্লীল নৃত্যের ঘটনায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এই অশ্লীলতা বন্ধ করে মেলাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। এবিষয়ে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ ও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ যাতে পুনরায় না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন এলাকার সাধারন জনগন।