বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল ॥ পটুয়াখালীর বাউফলের ১০টি খাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে মৃতপ্রায়। এগুলোর মধ্যে ৬টি খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করেছিল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ভরাট হয়ে পানি প্রবাহিত না হওয়ায় খালগুলো কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতা ও এডিস মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
ভরাট হওয়া খালগুলো হচ্ছে উপজেলার আদাবাড়িয়ার হাজিরহাট খাল, আদাবাড়িয়ার মাধবপুর খাল, ভাংরা নিজবটকাজল খাল, মাধবপুর খাসের হাওলা খাল, নওমাল নগরের হাট যৌতা খাল, অলিপুরা দাসপাড়া খাল, সাবুপুরা বটকাজল খাল, বগা ইউনিয়নের কৌখালি খাল, বগা বানাজোড়া খাল, নওমালা বেতাগী খাল।
এসব খাল লোহালিয়া নদী ও ভুরিয়া কাশিপুর নদীর সঙ্গে মিশেছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ১০টি খাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। এসব খাল ফসলি জমি ও গ্রামবাসীর পানির চাহিদা পূরণ, জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে।
মাধবপুর গ্রামের কৃষক আয়নাল সিকদার জানান, মাধবপুর, কৌখালি ও নিজবটকাজল খাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এক সময়ের খরস্রোতা খালে বর্ষাকালে এখন হাঁটুপানি। একই অবস্থা মাধবপুর খাসের হাওলা খাল, নওমাল নগরের হাট খাল, সাবুপুরা বটকাজল খাল, যৌতা নওমালা, বানাজোড়া, বেতাগী ভাংরা খালের।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানান, ভুরিয়া ও লোহালিয়া নদী থেকে উৎপন্ন হওয়া খাল উপজেলার আদাবাড়িয়া, বাউফল, বগা ও নওমালা ইাউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে। পানি বর্ষা মৌসুমে মাধবপুর খাল, নওমালা, ভাংরা, বেতাগী খালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, হাজিরহাট খাল, মাধবপুর নওমালা বেতাগী, হাট যৌতা, অলিপুরা খাল কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। প্রবাহ না থাকায় বর্তমানে খালগুলো বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
ভাংরা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার চৌকিদার ও খাসের হাওলার মালেক খাঁ জানান, খালগুলো পলিতে ভরাট ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। বর্ষার পানিতে খালের কচুরিপানা তাদের কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। চাষের সময় পচা ও দুর্গন্ধ পানি শরীরে লেগে চুলকায়। সাবুপুরা গ্রামের আলতাফ হোসেন জানান, খালে একটুও গভীরতা নেই। এ ছাড়া কচুরিপানায় ভর্তি। বৃষ্টিতে খালে পানি বাড়লে কচুরিপানায় তাদের ফসলি জমি ভরে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এসব খালের কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বদ্ধ পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এ খালগুলো শতাধিক গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। খালপাড়জুড়ে শত শত বাড়িঘর তৈরি করে গ্রামবাসী বসবাস করছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউ ভাবছেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, খালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এগুলো এখন মশার বংশবিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, গত এক সপ্তাহে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
নিজবটকাজল ও বটকাজল কৃষক সমিতির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য জালাল আকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো খনন না হওয়ায় পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জমিতে সেচ দিতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। তিনি জরুরিভাবে খাল খনন ও খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের দাবি জানান।
বাউফল উপজেলা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোশারেফ হোসেন বলেন, ৮০ ও ৯০ দশকে বাউফলের ছয়টি খালে পানি উনয়ন বোর্ড স্লুইসগেট নির্মাণ করে। দীর্ঘদিনে পলি জমে খালগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব খাল খননে প্রকল্প নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।