• ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বরিশাল-৩ আসন: বিএনপির একাধিক, জামায়াতের একক প্রার্থী

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১৬:৫৮ অপরাহ্ণ
বরিশাল-৩ আসন: বিএনপির একাধিক, জামায়াতের একক প্রার্থী

বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ দরজায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চুড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত করাসহ ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীকে প্রাধান্য দিয়ে ইতোমধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নির্বাচনের এই বাতাবরণে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ করে তাদের প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে জয় পেতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

আওয়ামী লীগ কখনো এ আসনটি থেকে এককভাবে জিততে পারেনি। তবে এ আসনটি সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা এড. শেখ মো. টিপু সুলতান একবার ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনের সাবেক এমপি জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

অপরদিকে, বিএনপির ‘ঘাটি’ বলে পরিচিত বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিএনপি থেকে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

এ আসনে দলটির ২ হেভিওয়েট নেতা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দুজনের বাড়ি দুই উপজেলায় হওয়ায় প্রার্থিতা নিয়ে দুই ভাগ হয়ে গেছে স্থানীয় বিএনপি।

একজন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান।

অপরজন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ। তরুণ রাজনৈতিক এ নেতার গ্রামের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি গ্রামে।

দলের দুঃসময়ে তিনি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা-মোকদ্দমা ফ্রিতে করে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন।

এমনকি তাদের ঢাকা থেকে বাড়ি আসার যাতায়াতের ভাড়া পর্যন্ত দিয়েছেন এই তরুণ বিএনপি নেতা। এ কারণ তরুণ যুব সমাজ ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।

অপরদিকে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এর আগে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন।

২০০৮ সালে জয়নুল আবেদীন স্বতন্ত্র নির্বাচন করায় বিএনপির প্রার্থী সেলিমা রহমানের নিশ্চিত বিজয় হাতছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদীন দুজনই হেরে যান।

জয়নুল আবেদীন তখন বিদ্রোহী প্রার্থী না হলে সেলিমা রহমান নিশ্চিত বিজয়ী হতেন। এ নিয়ে সেলিম রহমানপন্থী বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

২০১৮ সালে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েও জাপা প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে হেরে যান।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের বাড়ি মুলাদী উপজেলায়। বেগম সেলিমা রহমানের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলায়। আর বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একটি অংশ চায় বেগম সেলিমা রহমানকে প্রার্থী করা হোক।

তাদের যুক্তি, বিএনপি সরকারের সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমানের পরিবার রাজনৈতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ।

তিনি দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ থেকেছেন।

আসনটিতে ২০০৮ সালে বেগম সেলিমা রহমানই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় সেলিমা রহমান হেরে যান।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি নিয়মিত এলাকায় আসছেন। স্থানীয় নেতারাও সাংগঠনিক কাজ করছেন তার সঙ্গে।

অন্যদিকে মুলাদী উপজেলা বিএনপির অনেকে মনে করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে প্রার্থী করলে জয় পেতে সহজ হবে।

তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় জনগণের মধ্যে আগের চেয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ খান বলেন, এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ কোনোদিনই আসনটি থেকে জিততে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দুজন প্রার্থী (সেলিমা ও জয়নুল) ছিলেন বলে আসনটি হারায়।

এখানে বিএনপি থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন তিনিই বিজয়ী হবেন।

দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর এবার বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের সমর্থক নেতাকর্মীদের ব্যাপক পদচারণা দেখা গেছে।

এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনও একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর দলের মনোনীত প্রার্থী।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলামকে দলীয় একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুগঞ্জের সন্তান ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ তার দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় থাকায় নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক উত্তাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ সব দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।

তবে এ আসনে এনসিপি ও গণপরিষদ থেকে এখনো কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। এমনকি তাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না।

এছাড়া মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি। ফলে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থক নেতাকর্মীরা।