স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে বরিশাল নদী বন্দরে এখনও বীরদর্পে নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে যাচ্ছে স্বৈরাচারের দোসর শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির।
সূত্রে জানা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মহানগর শ্রমিকলীগ সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাসের নিয়ন্ত্রনে চলতো বরিশাল নদী বন্দর এলাকা। যেখানে পরিমলের ইশারা ছাড়া কিছুই হতো না। পরিমলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বরিশাল নদী বন্দরে ঘাট টিকিট কালোবাজারি শুরু করেন বিআইউব্লিউটিএর কর্মচারী নাসির, যার ফলে প্রতি মাসে রাজস্ব হারাতো সরকার। পরিমল চন্দ্র দাসের আর্শিবাদপুষ্ট নাসির বর্তমানে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন বরিশালে চাকুরির সুবাদে চৌকস নাসির বর্তমানে বরিশাল নদী বন্দরে পরিমলের নিয়ন্ত্রনে থাকা শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীদের দেখভাল করছেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৫ মার্চ রাতে বরিশাল নদী বন্দরে প্রবেশ টিকিট কাটাকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে কান ধরে ওঠবস ও মারধরের অভিযোগ ওঠে নদী বন্দরের ২ নম্বর কাউন্টারে কর্মরত শুল্ক প্রহরীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রাতে ববির শিক্ষার্থীরা বরিশাল নদী বন্দরে বিক্ষোভ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। তারা শিক্ষার্থীদের মারধর ও কানধরে ওঠবস করানোর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করে। এ ঘটনায় শুল্ক প্রহরী মো. মিজানুর রহমান, মো. কামাল হোসেন ও মো. জাকির হোসেন সাময়িক বরখাস্ত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত নাসির কৌশলে সটকে পড়ায় তিনি বরখাস্ত হয়নি। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সুচতুর নাসির দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত থাকার পরেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি সবসময়ই যেনো থাকেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৭ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল বরিশাল নদী বন্দরে অভিযান চালায়। দুই নম্বর প্রবেশ কাউন্টারের ড্রয়ার ও ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে যাত্রীদের কাছে বিক্রিত ৮৬৩টি টিকিট উদ্ধার হয়। এছাড়া ড্রয়ার থেকে প্রবেশ টিকিট বিক্রির টাকা ছাড়াও আরও আট হাজার টাকা পাওয়া যায়। টিকিট ছিঁড়ে না ফেলে পুনরায় বিক্রি করে ওই টাকা আত্মসাতচেষ্টার অভিযোগ ওঠে শুল্ক আদায়কারী ফারুক সরদার, মাসুদ হোসেন খান ও মনির হোসেন বিরুদ্ধে। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে ওই তিন শুল্ক আদায়কারী কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই ঘটনাও পরিমল চন্দ্রের প্রভাব খাঁটিয়ে পার পেয়ে যায় নাসির। সূত্র আরও জানায়, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে তৎকালীন সময়ে শুল্ক আদায়কারী ও শুল্ক প্রহরীকে অনত্র বদলি করা হয়। এছাড়াও তদারকির দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় বরিশাল কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে ঢাকার সদরঘাটে বদলি করা হয়েছে। খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাককে বরিশালে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক বরিশালে যোগদানের কিছুদিন সবকিছু কঠোরভাবে চললেও নাসিরের নেতৃত্বে আবারও শুরু হয় প্রবেশ টিকিট বিক্রির অনিয়ম, যা এখনও নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির।
গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য এড়াতে বরিশালে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলেও শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির যেন বরিশাল নদী বন্দরে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকলীগের কর্মীদের। একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানায় নাসিরের সাথে মহানগর শ্রমিকলীগ থেকে শুরু করে শ্রমিকলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের এক অনুসারী বরিশাল মহানগর শ্রমিকলীগের নেতা জানিয়েছেন, সাদিক আব্দুল্লায় মেয়র থাকাকালীন সময়ে পরিমল চন্দ্র দাসের আস্থাভাজন হয়ে বরিশাল নদী বন্দর নিয়ন্ত্রনে নেয় বিআইউব্লিউটিএর কর্মচারী নাসির। এরপর আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র হলে ঘাট নিয়ন্ত্রনে নেয় শ্রমিকলীগ নেতা খান হাবিব। পরে নাসির খান হাবিবের সাথেও গড়ে তোলেন সখ্যতা। ৫ আগষ্টের পরেও খাট ইজাদার হিসেবে খান হাবিবের দখলেই রয়েছে বরিশাল নদী বন্দর। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির এখনও বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপকর্ম।
এ ব্যাপারে নাসিরের কাজে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের ধারনা নেই, আমার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে দোতালায় গিয়ে বন্দর কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। এবিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি, তবে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দোসর নাসির কিভাবে এখনও স্বপদে বহাল রয়েছে সেই প্রশ্ন সাধারন মানুষের মাঝে। তারা অবিলম্বে নাসিরের দৃষ্টান্তমূলক শ^াস্তির দাবী জানিয়েছেন।