নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ঈদুল ফিতরের পরে ছয় দফায় অনুষ্ঠিত হবে দেশের সকল উপজেলা নির্বাচন। তবে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এমনকি নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে এমপি-মন্ত্রী এবং মেয়রদের কারো পক্ষে অবস্থান বা সমর্থনেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সরকারের। এরপরও মন্ত্রী এবং মেয়রের নাম ভাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা করছেন বরিশাল মহানগর যুবলীগ থেকে ইতিপূর্বে বহিস্কার হওয়া নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন। এমনকি ৭ মার্চের ব্যানারে আয়োজিত একটি নির্বাচনী আলোচনা সভায় প্রকাশ্যেই তাকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং বরিশাল সিটি মেয়রের সমর্থনের কথা প্রকাশ করেন রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ শাহরিয়ার বাবু।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভাব্য প্রার্থী, তাদের সমর্থক এবং দলীয় নেতারা। নির্বাচনের শুরুতেই খান মামুনের এমন অপপ্রচার সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলবে বলে দাবি তাদের। তাই এ বিষয়ে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জানা গেছে, ‘গত ১০ মার্চ নগরীর সদর রোডে সার্কিট হাউজের বিপরিতে সিটি ও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচন কার্যালয়ে ‘অগ্নিঝড়া ৭ মার্চ’ এর ব্যানারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক শামীম- এমপি এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সম্মানীত অতিথি করা হয়। এছাড়া বিশেষ অতিথি করা হয় সিটি মেয়রের সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহকে।
সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কেবিএস আহমেদ কবির। তবে আয়োজকের নাম লেখা নেই আলোচনা সভার ব্যানারে। এদিকে, আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন না পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এবং তার সহধর্মিণী নারী নেত্রী লুনা আবদুল্লাহ। তাঁরা না থাকলেও আলোচনা সভার ব্যানারে ছিলো প্রতিমন্ত্রী এবং মেয়রের ছবি। তাছাড়া ব্যানারে অগ্নিঝড়া মার্চের আলোচনা সভা উল্লেখ করা হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। যেখানে অগ্নিঝড়া মার্চের স্মৃতিচারণ না হলেও সকলের মুখেই ছিল চেয়ারম্যান প্রার্থী খান মামুনের বন্দনা। এমনকি নির্বাচনকালিন খান মামুনের আর্থিক লেনদেনের কথাও উঠে আসে বক্তব্যে। আলোচনা সভায় রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ শাহরিয়ার বাবু বলেন, ‘একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমকে।
তিনি থাকতে পারবেন না বিধায় তার স্থলে যুবলীগ নেতা খান মামুনকে প্রধান অতিথি করতে বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। এমনকি কিছুক্ষণ পরে প্রতিমন্ত্রী আমাকে ডেকে বলেন, খান মামুনকে একটু হাউলাইস কইরো। মাননীয় মন্ত্রী, মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এবং লুনা আবদুল্লাহ যদি আমাকে ডেকে বলে ‘মামুনের দিকে খেয়াল রাইখো, তাহলে কী আর নির্বাচন করতে বলার বাকি থাকে কিছু’!
এসময় নির্বাচনকালিন শাহরিয়ার বাবুকে ৩০ লাখ টাকা লেনদেনের কথাও বলেন তিনি। এদিকে, শুধু শাহরিয়ার বাবুই নয়, আলোচনায় অংশগ্রহণ করা মহানগর এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের বরাত দিয়ে খান মামুনের বন্দনায় মেতে ওঠেন।
ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সকল মহলে। তাদের এমন বক্তব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাধাগ্রস্থ করবে বলে মনে করছেন অনেকে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অগ্নিঝড়া মার্চের একটি অনুষ্ঠান। সেখানে ব্যানারে প্রতিমন্ত্রী এবং মেয়রের ছবি। সেই অনুষ্ঠানে নির্বাচনকেন্দ্রীক একজন প্রার্থীর পক্ষে কতিপয় নেতার এমন বক্তব্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী এবং মেয়রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাই এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। এদিকে, আলোচনা সভাতেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি লস্কর নুরুল হক নিজেই বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিয়েছে দলীয়ভাবে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তবে আমরা দলের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিতে পারি।
সকল নির্দেশনা যেনেও প্রতিমন্ত্রী-মেয়রের বরাত দিয়ে একজন প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মধু বলেন, ‘এ নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার প্রশ্নই আসে না। নির্বাচনে দল যদি নৌকার মনোনয়ন দিতো তবে সেটা আমিই পেতাম। যেখানে দল মনোনয়ন দিচ্ছে না সেখানে সমর্থন আসে কিভাবে।
আমি দেখছি, শুনছি, অনেকেই মনোনীয় প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র মহোদয়ের নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করছে। মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তাঁরা যে প্রচারটা করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী অনেকেই হয়েছে। তারা সবাই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী-মেয়রের নাম ব্যবহার করছে। ছবি ব্যবহার করা এবং সমর্থন দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয় এবং প্রভাবমুক্ত থাকে সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা করা উচিত বলে জানান তিনি।