• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পর্বতসম দুর্নীতি, অতিষ্ট দুই কর্মকর্তার মামলা

admin
প্রকাশিত মে ২৯, ২০১৮, ১০:০১ পূর্বাহ্ণ
বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পর্বতসম দুর্নীতি, অতিষ্ট দুই কর্মকর্তার মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আর.সি ফুড) রেজা মোঃ মহসিনের বিরুদ্ধে তার দপ্তরে অসাসান্য অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। দপ্তরের বিভিন্ন সূত্রে এবং অসংলগ্ন সিদ্ধান্তে অতিষ্ঠ হয়ে দুই কর্মকর্তা কর্তৃক তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে এ কর্মকর্তার অনিয়ম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। খাদ্য দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বরিশালে যোগদানের মাত্র এক বছরের মধ্যে রেজা মোঃ মহসিন ৩২টি বদলী আদেশ জারী করে নজির সৃষ্টি করেছেন। অযোগ্য-অদক্ষ লোকদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বদলী করায় এ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে রীতিমত বদলী-আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে তিনি চাকরিবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন করে যোগ্যদের সরিয়ে সেই চেয়ারে প্রাপ্তির অযোগ্য কর্মকর্তাদের বসিয়েছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল বরিশালে বিজ্ঞ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন বরগুনা সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিভাগীয় খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মোশারেফ হোসেন বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম। মামলায় বিবাদী করা হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর প্রশাসন বিভাগের পরিচালক, বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং দুমকী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত খাদ্য পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন। মামলায় বাদীদ্বয় উল্লেখ করেন, খাদ্য দপ্তরের চাকরিবিধি অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা / কর্মচারী দুর্নীতির অভিযোগে দন্ডিত হলে দন্ড প্রদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে কোন খাদ্য গুদামের দায়িত্ব পাবেন না এবং একই কর্মস্থলে দুই বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতিরেকে তাকে অন্যত্র বদলী করা যাবে।

কিন্তু বাদীদ্বয়ের সঙ্গে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক চাকরিবিধির উল্লেখিত নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। মামলায় বলা হয়, ৮ নম্বর বিবাদী দুমকী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত খাদ্য পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন বরিশাল সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীন তদন্ত শেষে তার দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ায় গত ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর আবদুল্লাহ আল মামুনকে তিরস্কার দন্ড প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক তিনি দন্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়ায় পরবর্তী তিন বছর মামুনকে কোন খাদ্য গুদামের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। কিন্তু ৪ নম্বর বিবাদী বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোঃ মহসিন অবৈধভাবে চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি আবদুল্লাহ আল মামুনকে বরগুনা সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলী আদেশ জারী করেন (যার স্মারক-১৮০)।

আর বরগুনা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোশারেফ হোসেনকে বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে বদলী করেন। এক্ষেত্রেও তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে একজন কর্মকর্তাকে বদলী না করার বিধান থাকলেও কলসকাঠী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দুই বছর পূর্ণ হওয়ার ৭ মাস আগে তাকে অন্যত্র বদলী করেন। তাই ওই বদলী আদেশ বাতিল চেয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ওই দুই কর্মকর্তা।

অভিযোগ আছে, দুর্নীতির অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে বরগুনা সদর খাদ্য গুদামের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলী আদেশ দিয়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোঃ মহসিন। এদিকে মামলার খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে গুদামের দায়িত্বভার দেওয়ার দাবি করে ২৬ মে গুদামে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে আল মামুন। একপর্যায়ে মোশারেফ হোসেনের হাতের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয় সে। এ ঘটনায় ওই দিনই নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মোশারেফ হোসেন। খাদ্য পরিদর্শক আল মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালসহ পূর্বের কর্মস্থলগুলোয় অনিয়ম-দুর্নীতির বহু অভিযোগ আছে বলে খাদ্য দপ্তরের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।

অপরদিকে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোঃ সেলিমের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বরিশালে তার কর্মকাল মাত্র এক বছর হলেও এরই মধ্যে অন্তত ৩২টি বদলী আদেশ জারী করেছেন তিনি। যা নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানা গেছে। আর সবগুলো বদলীই হয়েছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বদলীকৃত কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী। এক্ষেত্রেও অযোগ্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজন খাদ্য পরিদর্শককে দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এ অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গুদামে উপ-খাদ্য পরিদর্শককে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পটুয়াখালী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজিৎ কুমার রায়, খেপুপাড়া খাদ্য গুদামে মনির উজ্জামান, গলাচিপা খাদ্য গুদামে মঞ্জুরুল আহসান, পিরোজপুর সদর খাদ্য গুদামে জিয়াউল মোর্শেদ, মেহেন্দিগঞ্জে আকরাম হোসেন, মঠবাড়িয়ায় ইমদাদ হোসেন, ইন্দেরহাটে লিয়াকত হোসেন। এরা সকলেই উপ-খাদ্য পরিদর্শক। এইসব গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য গুদামে পূর্বে একজন করে খাদ্য পরিদর্শক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও রেজা মোঃ মহসিন অর্থের বিনিময়ে তাদের সরিয়ে উপ-খাদ্য পরিদর্শকদের সেই চেয়ারে বসিয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোঃ মহসিন বলেন, নিয়ম মেনেই সবাইকে বদলী করা হয়েছে। চাকরিবিধি ভঙ্গ করা বা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগগুলো সত্য নয়।