স্টাফ রিপোর্টার
ঘটনা ১ মোঃ সালাউদ্দিন, অপরাধী নয়। মামলাও নেই তার বিরুদ্ধে। তবুও বরিশাল কারাগারে আছেন গত ৫দিন ধরে। তিনি ভুয়া ওয়ারেন্টের শিকার হয়েছেন। মোঃ সালাউদ্দিনের বাড়ি বাবুগঞ্জের রহমাতপুর এলাকায়। পিতা কাজী মুনসুর আলী।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন তিনি ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হয়েছেন। রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার সাবইন্সেপেক্টর সাইদুল ইসলাম গত ২৮ জুন রাত ১০টায় রহমতপুর কাজী বাড়ি থেকে মোঃ সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেন। রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা নম্বর-৩২৯/১৬।
ধারা মানব পাচার আইনের ৭/৮/৯/১২। ওয়ারেন্ট নং-৩৭২৫, ইস্যুর তারিখ ১৩/৬/১৯। ঘটনা ২ উপরের একই মামলায় নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধেও ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।
জেল হাজতের বাসিন্দা মোঃ সালাউদ্দিন নবগ্রামে রোডের খান এন্টার প্রাইজের মালিক নজরুল ইসলাম খানের ম্যানেজার বলে জানাগেছে। একই মামলায় মালিক নজরুল ইসলাম খান ও ম্যানেজার মোঃ সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, মোঃ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করাতে বরিশাল নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিক্সা চালক বারেকের পূত্র এয়ারপোর্ট ও কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী মোঃ মঈন খান তার ০১৯২৩৩২১২৯৩-এ নাম্বার থেকে এয়ারপোর্ট থানার সাব ইন্সেপেক্টর সাইদুল ইসলামকে ১৯ বার ফোন করে মোঃ সালাউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেন।
মঈনের তথ্যমতে গত ২৮জুন রাতে মোঃ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেন ইন্সেপেক্টর সাইদুল ইসলাম। এসময় মোঃ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে অভিযান সফল হয়েছেন বলে মোঃ মঈনকে মোবাইলে নিশ্চিত করেন ইন্সেপেক্টর সাইদুল ইসলাম। একই মামলায় ভুয়া ওয়ারেন্টের শিকার নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ নজরুল ইসলাম খান ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামী এমন কথা জানিয়ে ২৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বারেকের পূত্র মোঃ মঈন বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম ও তার থানার এক এসআইকে একাধিকবার ফোন করে নজরুল ইসলাম খানকে গ্রেপ্তার করতে আকুতি জানান। একই দিনে অসংখ্যবার কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামকে মোঃ মঈন ভুয়া ওয়ারেন্টের শিকার নজরুলকে গ্রেপ্তার করতে ফোন করলে কর্মদক্ষতায় চৌকাস অফিসার নুরুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে এ পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান ওয়ারেন্ট জারির বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়।
এসময় হয়রানীর শিকার নজরুল ইসলাম খান ওসি নুরুল ইসলামকে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সেই মামলার কাগজপত্র দেখান এবং বলেন তিনি ও তার দোকানের ম্যানেজারের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। সেই ভুয়া ওয়ারেন্টে তার ম্যানেজার মাঃ সালাউদ্দিনকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।
প্রাথমিকভাবে ওসি তাদের ২ জনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারির মামলার নথিপত্রে নজরুল ও সালাউদ্দিন নাম ঠিকানার গন্ধও নেই বলে নিশ্চত হয়েছেন। তবুও কিভাবে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হলো তার উদঘাটন করতে বর্তমানে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, এ ভুয়া ওয়ান্টের পিছনে সরাসরী হাত রয়েছে বরিশাল জর্জ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মজিবুর রহমান নান্টুর সহকারী এবিএম বাশারের।
তিনি এই ভুয়া ওয়ান্টের পিছনে কলকাঠি নাড়ছেন। আর এসময় অপকর্ম সামনে থেকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাশারের সহযোগী বারেকের পূত্র মোঃ মঈন। যদিও নারী শিশু নির্যাতনের মামলায় নজরুল ও সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারিতে সহযোগীতা করেছেন রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার তুহিন।
বিশেষ সূত্রে জানাগেছে, নজরুল ও তার ম্যানেজার সালাউদ্দিনের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারির জন্য পেশকার তুহিনকে এবিএম বাশার খান ৫২ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার তুহিনের ০১৭১১০৬৬৭৪৬ নাম্বারে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। ভুয়া ওয়ারেন্ট চক্রের হোতা এই বাশার ভূক্তভোগী নজরুল ইসলাম খানের আপন ছোট ভাই বলে জানাগেছে।
তাদের দু’জনার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। তাইতো বড় ভাই নজরুল ইসলামকে হয়রানী করতে বাশার এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম খান। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। অন্যের সাহার্য্য ছাড়া এক যায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি না।
আমি কিভাবে রাজশাহী গিয়ে শিশুকে নির্যাতন করব। তাছাড়া আমার জীবনে কোনদিন রাজশাহী যায়েনি। আমাকে ও আমার ম্যানেজার সালাউদ্দিনকে হয়রানী করতে আমার ছোট ভাই বাশার এই ভুয়া ওয়ারেন্ট বের করেছে। আমি তার কঠিন শাস্তি চাই। অভিযুক্ত এই বাশার ও তার সহযোগী মঈন প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বিভিন্ন বিচারকের সিল-স্বাক্ষর জালিয়াতি করে খুব সহজে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে পুলিশের কাছে পাঠাচ্ছে বলেও অসমর্থিত একটি সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিরীহ লোকদের বিনা অপরাধে হয়রানি-মানহানি করতে এ কাজ করছে বাশারের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের ভয়ে নজরুল ইসলাম খান নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্রে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানাগেছে। যদিও ভুয়া ওয়ারেন্টের শিকার মোঃ নজরুল ইসলাম খান গত ৩০ জুন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানের সাথে দেখা করে তার বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারির বিষয়টি অবহিত করেন।
এসময় মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ এ চৌকস কমর্কতা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএমকে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারির পিছনে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে তাকে ও থানার এসআইকে বারবার ফোন করা মোঃ মঈনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশের জিম্মায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কিন্তু গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঈনের নাগাল পায়নি কোতয়ালী পুলিশ। বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জর্জ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মজিবুর রহমান নান্টুর নাম ভাঙিয়ে সহকারী এবিএম বাশার খান বিভিন্ন কু-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যার প্রমান স্বরুপ এ ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি। এ ওয়ারেন্টের পিছনে বাশার কলকাঠি নাড়লেও তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না। তার মিশন বাস্তবায়ন করাচ্ছেন সহযোগী মোঃ মঈনকে দিয়ে। বাশার নিজেকে সেইভসাইডে রাখতে ‘ধুরি মাছ না ছুই পানি’ পন্থা অবলম্বন করে যাচ্ছেন। কিন্তু চোরের দশদিন গৃরস্থের একদিন এমন প্রবাদবাক্যের সত্যতা মিলতে পারে যে কোন সময়। কারন এই ভুয়া ওয়ারেন্ট জারির পিছনে জড়িত থাকা ব্যাক্তিদের পুলিশ তাদের জালে আটকাতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানাগেছে। তাইতো ভুয়া ওয়ারেন্ট চক্রের হোতা কু-চতুর ধুরন্দার এবিএম বাশার খান ও তার প্রধান সহযোগী মোঃ মঈন ফেঁসে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাশারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমি এসবের বিষয়ে কিছুই জানি না। মঈনের কাছে জানতে চাইলে সে জানান, নজরুলের সাথে আমার পরিবারের মামলা মোকদ্দমা রয়েছে তাই সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। আমি ভুয়া ওয়ারেন্টের সাথে জড়িত নই। এবিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, নবগ্রাম রোডের নজরুলকে গ্রেপ্তার করতে এক ব্যাক্তি আমার থানার এক এসআইকে একাধিকবার ফোন দিয়েছে তা সত্য। এ চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।