• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বরিশালে ফুটপাত-শপিংমলে ক্রেতাদের ঢল

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত মে ৯, ২০২১, ১৬:১৮ অপরাহ্ণ
বরিশালে ফুটপাত-শপিংমলে ক্রেতাদের ঢল

বিডি ক্রাইম ডেস্ক ॥ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে বরিশাল নগরীর ফুটপাত-শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। নগরীর মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনীহা লক্ষ করা গেছে।

রোববার (৯ মে) নগরীর বিপনীবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, দোকানের বিক্রয়কর্মীদের মুখে মাস্ক নেই। জীবাণুনাশক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারও দেখা যায়নি দোকানগুলোতে। কিছু ক্রেতার মধ্যে মাস্ক পরার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা গেছে।

মার্কেট-বিপনিবিতান ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতার গাদাগাদি করে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করেই তারা কেনাকাটা করছেন। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

বরিশালের মানুষের কেনাকাটার একটি বড় কেন্দ্র চকবাজার-কাঠপট্টি-লাইনরোড-পদ্মাবতি। অন্য বছরগুলোতে ঈদের আগে এসময় কেনাকাটায় সেখানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকতো।

এবার করোনা সংক্রমণের মধ্যে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। শিশু থেকে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষদের ভিড় ঠেলে ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।

চকবাজারের কয়েকটি বিপনিবিতানের কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রেতারা কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন।

তবে শনিবার মার্কেটে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। তারা যে যার সামর্থ্য মত জামা, কাপড়, শাড়ি কিনছেন।

সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান-শপিংমল খোলা রাখার বিধি-নিষেধ থাকলেও ক্রেতাদের কারণে তা মানা সম্ভব হচ্ছে না।

গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতা থাকায় রাত ১২টা বা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।

বিকেলে চকবাজারে কেনাকাটা করতে আসা তনিমা বেগম নামে এক গৃহিণীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি চার বছরের মেয়ে, ননদ ও তার ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন।

তাদের কারো মুখে মাস্ক ছিলনা। তনিমা বেগম বলেন, দুপুর দুইটার দিকে তারা মার্কেটে এসেছেন। তখন তাদের মুখে মাস্ক ছিল।

প্রচণ্ড গরম ও মানুষের গাদাগাদিতে তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এ কারণে তার মাস্ক খুলে রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েরা ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনতে বায়না ধরেছে। তাড়াতও আর করোনা বুঝে না।

তাই তাদের আবদার পূরণে কেনাকাটা করতে মার্কেটে আসতে হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার জামা-কাপড়সহ সবকিছুরই দাম বেশি। তাই দামদর করে কিনতে সময় লাগছে।

চকবাজার-কাঠপট্টি-লাইনরোড-পদ্মাবতি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রহিম জানান, করোনার কারণে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। ব্যবসায়ীদের লাখ-লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রেতারা মার্কেট মুখি। বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তারা দামদর করে পছন্দের জামা-কাপড় কিনছেন। এতে কিছুটা হলেও টিকে থাকা সম্ভব হবে।

সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রহিম বলেন, করোনা বিস্তার ঠেকাতে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষে থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

যেমন চকবাজার, কাঠপট্টি, লাইনরোড ও পদ্মাবতির চারটি স্থানে হাত ধোয়ার জন্য ড্রামে পানি ও সাবান রাখা হয়েছে।

এছাড়া সমিতির পক্ষ থেকে চারজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ঘুরে-ঘুরে মাস্ক ছাড়া মার্কেটে আসা ব্যক্তিদের মাস্ক দিচ্ছেন।

পাশাপাশি দোকান মালিকরা মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতার কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করছেন। কেউ দোকানে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করলে তাদের মুখে মাস্ক পড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

তবে শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ক্রেতাদের মানাতে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও যতদূর সম্ভব শারীরিক দূরত্ব মেনে বেচাকেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আমাদের ঘর থেকে বের হওয়া ঠিক হচ্ছেনা।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ। তা না হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ও ভয়াবহ আকরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে করোনাভাইরাসের বিস্তার না ঘটে সে জন্য সকাল থেকে রাত ৮ পর্যন্ত নগরীর মার্কেট-বিপনিবিতান ও শপিংমলগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন।

পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের করোনার ভয়াবহতা থেকে সতর্ক ও মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। তবে করোনার ঝুঁকি এড়াতে ও স্বাস্থ্য বিধি মানতে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তা না হলে শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এর সুফল পাওয়া যাবে না।