• ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বরিশালে গ্রিল-নেটে বন্দি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১৭:৩৪ অপরাহ্ণ
বরিশালে গ্রিল-নেটে বন্দি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুর

বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী এক জলাশয় বিবির পুকুর। একসময় এই পুকুর ছিল শহরের প্রাণ। এখন সেই পুকুর আর আগের মতো নেই। তাই পুকুরটির সৌন্দর্য ফেরাতে বসানো হচ্ছে ফোয়ারা। কিন্তু পুকুরটির দক্ষিণ পাশে বসানো হয়েছে লোহার তৈরি বিশাল খাঁচা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকা ঘিরে ফেলার প্রস্তুতিও চলছে নেট দিয়ে। জানা গেছে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) গভীর রাতে এই খাঁচা বসানো হয়।

স্থানীয়দের আশঙ্কা এই খাঁচায় হারিয়ে যাবে বিবির পুকুরের খোলা আকাশ, মুক্ত সৌন্দর্য। এর আগেও শহরের আরেক প্রান্তে, বেলস পার্ক লেক ঘিরে দেওয়ার উদ্যোগে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হলে নাগরিকদের মানববন্ধন, চিত্রাঙ্কন আর স্মারকলিপির পর সেই কাজ স্থগিত হয়। তবে এবার যেন সেই পুরানো গল্পই ফিরে আসছে বিবির পুকুরে।

বিবির পুকুর শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি ইতিহাসের ধারক। জানা যায়, খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক উইলিয়াম কেরি ১৮০০ সালের দিকে বরিশালে এসে এক মুসলিম মেয়েকে পর্তুগিজ দস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করেন। নাম রাখেন জিন্নাত বিবি। নিঃসন্তান এই নারী ১৯০৮ সালে নিজের জমিতে এই পুকুর খনন করেন মানুষের উপকারে। সেই থেকে জলাশয়টির নাম, বিবির পুকুর।

প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থের এই জলাশয় একসময় কীর্তনখোলা নদীর সঙ্গে দুটি খাল দিয়ে সংযুক্ত ছিল। নদীর জোয়ারে পানি এসে ভরে দিত পুকুর, মাছও আসত। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই খাল আজ বিলুপ্ত, আর পুকুরটিও হয়ে পড়েছে বদ্ধ ও নিস্তরঙ্গ। কয়েক বছর আগে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন পুকুর ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন। পার্ক, বেঞ্চ, আলোকসজ্জা, ফোয়ারা; সব ছিল সেই পরিকল্পনায়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে সেই জৌলুস। পুকুরের দক্ষিণ পাশে অবৈধ দোকান উঠলেও কিছুদিন পর আবার বসানো হয় করপোরেশনের অনুমতিতে।

স্থানীয় কবি ও ইতিহাসবিদ হেনরি স্বপন বলেন, একসময় বিবির পুকুর ছিল আমাদের শহরের গর্ব। এখন সেখানে মাছ চাষ, দোকান, ময়লার গন্ধ, সব মিলিয়ে জীর্ণ অবস্থা। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা যেন এই জায়গাটাকেই ভুলে গেছেন। যে শহর নিজের জলাশয় বাঁচাতে পারে না, সে তার ইতিহাসও টিকিয়ে রাখতে পারে না।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বাজার কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাড়া তুলছিলেন, তাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। বৈধ ব্যবসায়ীদের জন্য স্টিকার দেওয়া হচ্ছে, প্রতিদিন ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী জানান, ফোয়ারার কাজ প্রায় শেষ। কাজ শেষ হলে বিবির পুকুর তার আগের রূপ ফিরে পাবে। এছাড়া পুকুর রক্ষার জন্য ময়লা যাতে পুকুরে না পড়ে, সে জন্যই গ্রিল ও নেট বসানো হচ্ছে।