বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাধার কারণে ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএলএসটি) বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ আবারও চালু করার চেষ্টা চলছে। তবে প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ায় সহসাই জটিলতা কাটছে না।
যদিও সম্প্রতি বিষয়টি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নতুন করে অবগত করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ৬৫ টাকা ব্যয়ে বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় সরকারি হাঁস-মুরগির খামারের পাশে প্রাণিসম্পদ খাতের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। কিন্তু জলাশয় ভরাটের অভিযোগ তুলে তৎকালীন সিটি মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর আর প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক কারণে ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) স্থাপন প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হয়নি বরিশালে।
এরপর প্রকল্পের অর্থ-ই ফেরত চলে যায়, আমরা কাজটি পুনরায় শুরু করা যায় কি না সেটির চেষ্টা করছি।
তবে প্রকল্পের টাকা ফেরত গেলে সেই কাজ আবারও নতুন করে শুরু থেকে আরম্ভ করতে হয়। অর্থাৎ আবার এই প্রকল্পের বিষয়টি একনেকে পাস হয়ে আসতে হবে।
তাই অনেকটা জটিলতার সৃষ্টি এখন হয়েছে। যদিও কিছুদিন আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বরিশালে আসলে তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বরিশালে চালু হলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, বিভাগের অন্য কোথাও হলে সেই উপকার হয়ত পাওয়া যাবে না, তাই বরিশালেই এটি চালু করার চেষ্টা চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী প্রাণিসম্পদ বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করতে পারতো।
প্রকল্পের আওতায় একাধিক অ্যাকাডেমিক ভবন এবং ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল ছাড়াও অফিস ভবন, টিচার্স ডরমিটরি, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, হেলথ কেয়ার সেন্টার ছাড়াও একটি অত্যাধুনিক প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল স্থাপনের কথা ছিল।
এখানে রাজস্ব খাতে প্রায় ৫০ জন জনবল নিয়োগ হতো। এছাড়াও আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে আরও অন্তত ২৫ জনের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হতো। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা হতো।
প্রকল্পের সাবেক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করার পর ওই সময়ের মেয়র কাজটি বন্ধ করে দেয়।
তাকে কোনোভাবে কাজ শুরুর বিষয়ে রাজি করানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। তাই প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জানিয়েছেন, যে জমিতে প্রতিষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল, সেটি জলাশয়।
এ কারণে তখনকার মেয়র (শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ) সেখানে বালু ভরাট ও ভবন নির্মাণে বাধা দেন। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
তবে এর থেকে বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।