• ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বরিশালে অত্যাধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত অক্টোবর ১, ২০২৩, ১৪:৩৯ অপরাহ্ণ
বরিশালে অত্যাধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন

বিডি ক্রাইম ডেস্কঃ শতকোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক নৌ বন্দর। বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৮ জনের মাঝে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদী বন্দরের দ্বি-তল টার্মিনাল ভবন বর্ধিতকরণ, ৬ তলা ফাউন্ডেশনে ৪ তলাবিশিষ্ট ৫০ ফুটের নতুন মাল্টিস্টোর বিল্ডিং নির্মাণ হবে। যেখানে থাকবে নৌ পুলিশের থানাসহ আরও অনেক সুবিধা। এছাড়া খেয়াঘাট থেকে প্রতিটি ১২০ ফুট করে নতুন তিনটি পন্টুন স্থাপন, ড্যাম প্রটেকশন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। স্থানান্তর করা হবে চরকাউয়া খেয়া ও স্পিডবোট ঘাট।

একসময় যাত্রীদের পদচারণায় মুখর ছিল বরিশাল নৌবন্দরটি। তখন যাত্রী চাপ সামাল দিতে দৈনিক চলাচল করত ৮-১২টি লঞ্চ। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করছে মাত্র দুটি লঞ্চ। যে কারণে ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে বন্দরের পন্টুনগুলো। যাত্রী সংকটের এমন সময়ে বরিশাল নদীবন্দরকেন্দ্রিক এই প্রকল্প বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলছে। তাদের মতে, যাত্রী সংকটে যেখানে একের পর এক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে নদীবন্দর সম্প্রসারণে এ ধরনের বিলাসী আয়োজন সরকারি সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। এটা না করে নদীপথ ড্রেজিংয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

এদিকে প্রকল্প সাইটের ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৮ ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তার কার্যালয়ে চেক বিতরণ করা হয়। বরিশাল বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মোট ৩৫৫ জনকে সাহায়তা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা আব্দুর রশিদ নিলু বলেন, এ প্রকল্পের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। যেখানে নাব্য সংকটে নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে ৩০টির মতো। তা উদ্ধারে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না করে নৌবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প হাস্যকর। যাত্রীরা নৌপথ ছেড়ে এখন সড়ক পথেই ছুটছে। তাই বন্ধ হয়ে গেছে বড় বড় লঞ্চ চলাচল। মাত্র দুটি লঞ্চ চলছে এ নৌরুটে। এখন ফাঁকা পড়ে থাকছে নৌবন্দর।

তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে ফেরত যাবে পুরো বরাদ্দের টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ। বরিশাল নদীবন্দরে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পটি এখন না হলেও ভবিষ্যতে কাজে আসবে বলে মনে করেন বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এএইচএম ফরহাদউজ্জামান।

সংস্থাটির বরিশাল প্রকৌশল শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন উর রশীদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্পটি নতুন নয়, ২০১৬ সালের। তখন বরিশাল নদীবন্দরে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ছিল। তখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলেও এখন হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয় তখন বরিশাল নদীবন্দরের চিত্র এক রকম ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পরে সে চিত্র একেবারেই পালটে গেছে। তাই প্রকল্পটি পরিবর্তন করে ড্রেজিং প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ছিল আমাদের। এ নিয়ে ঢাকা-বরিশালে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে পুরো টাকাই ফেরত যাবে। তাই বাধ্য হয়েই নদীবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, একসময় আমরা বরিশাল নদীবন্দরে টার্মিনাল সংকটে লঞ্চ পন্টুনে বাঁধতে সমস্যায় ভুগেছি। তখন কেউ আমাদের কথা শোনেনি। এখন যাত্রী নেই। লঞ্চ বন্ধ করে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চিন্তা করছি। এখন এত বড় প্রকল্প ও আধুনিক নদীবন্দর দিয়ে কী হবে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এএইচএম ফরহাদউজ্জামান বলেন, ‘বরিশাল নদীবন্দরের এ প্রকল্পটি অনেক পুরোনো। এখন যাত্রী সংকট থাকলেও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে লঞ্চে যাত্রী কমেছে এটা সত্যি। তবে এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে নৌপথের সেই জৌলুস ফিরে আসবে। কেননা এখন যে জনসংখ্যা তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তখন হয়তো সড়কপথে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। আর সড়কপথের পাশাপাশি নৌপথও টিকিয়ে রাখতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেই সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে।