শামীম আহমেদ ॥ বরিশালের হিজলায় স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে মৎস অধিদপ্তরের নেতৃত্বে অভিযানিক দলের ওপর হামলার অভিযোগ আর এ সংক্রান্তে একটি ভিডিও বৃহষ্পতিবার বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তবে ওই হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম। জানাগেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৎস অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের সদস্যদের অবৈধ জাল উদ্ধারের অভিযানে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই হিজলার হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরোধের সূত্রপাত থেকেই বৃহষ্পতিবার (০৪ এপ্রিল) বিকেলের দিকে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, বিপুল পরিমানে অবৈধ জাল রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নৌ পুলিশের সদস্যদের সহযোগীতায় মৎস অধিদপ্তরের লোকজন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে গোটা বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ পাওয়া যায়নি, পরে বাড়ির মহিলা সদস্যদের সাথে কথা বলে একবস্তা অবৈধ জালের দেখা মেলে। তবে ওই মহিলারা জানায় ৫-৬ দিন আগে বিপুল পরিমান জাল এবং টাকা পয়সা নিয়ে গেছে হিজলা ফাড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ সদস্যরা । তবে সস্প্রতি হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশ কোন অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল পুড়িয়েছে বা ধ্বংস করেছে এমন তথ্য মৎস বিভাগের কারও কাছে ছিল না। সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম সাহেবকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি।
কাছাকাছি হওয়ায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই আসেন, এসময় তার সামনেই জাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করেন স্থানীয়রা। সেইসাথে অভিযানিক দলের সদস্যরাও তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং আমাদের অভিযানিক দলের সাথে থাকা মাঝিদের গালাগাল শুরু করেন এবং সবার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে। তিনি বলেন, এরপর ঘটনাস্থল থেকে হিজলা সদরে চলে আসার পথে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ একাধিক পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে আমাদের যানবাহনের গতিরোধ করে। যারমধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য নেমেই থ্রি-হুইলারের সামনে থাকা মাঝি সাইফুল ইসলামকে গালাগাল ও মারধর করে। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেরে গেলে অন্যরা তাতে বাধা দেয়। তখন মাঠকর্মী হানিফ, মাঝি ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলার শিকার হয়। একই সময়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম আমাকে গালাগাল করেন এবং দেখে নেয়াসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। পরে বিষয়টি হিজলা থানা পুলিশ ও নৌ- পুলিশের ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। এ বিষয়ে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, মৎস অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আমার জানানেই, তখন আমি অফিসে ছিলাম। বিকেল ৪ টার দিকে মৎস বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি গেলে মৎস বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, আমি নাকি ওই বাড়িতে কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়েছি। তখন আমি বলেছি জাল ও মাছের বিষয় মৎস বিভাগ দেখে বলে এ ধরণের কোন বিষয় আমরা অগ্রিম কিছু করিনা। এরপর ওই বাড়ির মহিলারাও আমার সামনে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এরপর সেখান থেকে থানায় চলে আসার পথে অভিযানিক দলের সাথে আবারও দেখা হয় এবং কথা হয়।
তখন মৎস বিভাগের মাঝি ওই এলাকার লোকদের ডাক দিয়ে আমাদের মারতে বলে। সেসময় আমি মৎস বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি শান্ত করতে বলি এবং আমার ফোর্সরাও পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি আমার থানার ওসিকেও জানিয়েছি। তবে প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম মৎস কর্মকর্তাকে শাসাচ্ছেন এবং তার দুই সহযোগী অভিযানিক দলের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং বেধম মারধর রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে করছেন। আর নৌ পুলিশের সদস্যরা সবাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রকাশ্যে এভাবে কাউকে মারধর পুলিশ সদস্যরা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম জানান মারধর নয় পরিস্থিতি শান্ত করেছে তার সাথে যাওয়া পুলিশের সদস্য এনাম ও শাকিল। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি, আপনি পুরো ভিডিও ভালভাবে দেখেন। যদিও গোটা বিষয়ে হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে কোন পুলিশ সদস্য কাউকে মারধর করলে কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করলে সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি। অন্যদিকে হিজলা নৌ পুলিশের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযানে গিয়ে থানা পুলিশের সাথে মৎস বিভাগের কর্মকর্তাদের ঝামেলা ও হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশের সদস্যরা ছিল, তবে পুরো বিষয়টি এখনও বিস্তারিত জানিনা। আর যেহেতু থানা পুলিশের সদস্যদের সাথে হয়েছে তাই আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে জানাইনি। আর জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিডিও পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। মৎস দপ্তরের অভিযানিক দলের ওপর পুলিশ সদস্যদের হামলা, ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিও।