• ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১০ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশী শ্রমিক নিহতর ঘটনায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে রনক্ষেত্র আহত ১০ : ব্যাপক ভাংচুর

admin
প্রকাশিত জুন ১৮, ২০১৯, ২১:৫১ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশী শ্রমিক নিহতর ঘটনায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে রনক্ষেত্র আহত ১০ : ব্যাপক ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাঙালী শ্রমিকের লাশ গুমের গুজবকে কেন্দ্র করে চায়না ও বাঙালী শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে হামলা, ভাংচুর সহ ব্যাপক তান্ডব চালায়।

এতে ৮ জন চায়না নাগরিক সহ উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জন চায়নিজ ও ১ জন বাঙালীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত চায়নিজরা হলেন- Xu Gang (54), Lin Young lin (40), Muzang hua (35), Hang sheng (60), Zang Yun Seng (26), Linlu (52)|

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা।

প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন বাঙালী শ্রমিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে নির্মানাধীন বয়লার থেকে বেল্ট ছিড়ে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় বাঙালী শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস (৩২) এর। সে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের নগেন্দ্র দাস এর ছেলে। গত ১৪ মে থেকে ধরে সে কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের ‘কাজল এন্টার প্রাইজ’ নামক প্রতিষ্ঠানের অধিনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করে আসছিলো বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী মো. কাজল মৃধা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শ্রমিকের মৃত্যুর পরে চায়নাদের বিরুদ্ধে তার লাশ গুমের গুজব ছড়ানো হয়। এতে বাঙালী শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়। এক পর্যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় ছয় হাজার বাঙালী শ্রমিক এক হয়ে তিন সতাধিক চায়নিজ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিসিপিসিএল কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

খবর পেয়ে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের নিয়োজিত পুলিশ, কলাপাড়া থানা পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে শেষ বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তার মধ্যেই বাঙালী শ্রমিকরা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ব্যাপক ভাংচুর করে। চায়নিজ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে আসলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

বিসিপিসিএল এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহমনি জিকো জানান, ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গুজবের কারণে উত্তেজিত হয়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে চায়নিজদের ক্যান্টিন, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও ওয়েল্ডারে হামলা-ভাংচুর চালায়। তাতে বাধা দিতে গেলে চায়নিজদের ওপরে হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তবে হামলায় বেশ কয়েকজন চায়নিজ নাগরিকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের প্রথমে পটুয়াখালী এবং পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া নিহত শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সবাই যেভাবে শুনছে আমিও সেভাবেই শুনছি। এক শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চায়নিজদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে ৮ জন চায়নিজ নাগরিক আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ৬ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি দু’জনকেও এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে কোন বাঙালী শ্রমিক আহত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।