বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল ॥ আগামী ২৮ এপ্রিল ২০২৪ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ১৩নং ভূরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচন সম্পূণরুপে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও শতভাগ নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে মিলাদ মাহফিলের নামে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। রুবেল মোল্লার বিরুদ্ধে এমন গুরত্বর অভিযোগ তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম সোহাগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ বিকালে ভূরিয়া ফজলুল করিম মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় মরহুম ফজলুল করিম মোল্লার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লা। উক্ত মিলাদ মাহফিলে অংশনেন সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, পিএসসি সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় ৩০০০ মানুষ। ঐ মিলাদ মহফিলে মরহুম ফজলুল করিম মোল্লার পূত্র সাবেক জনপ্রশাসন সচিব বর্তমান (পিএসসি) সদস্য ফয়েজ মোল্লা, তার জামাই সাবেক সচিব আজাদ মিয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান, পৌর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ, ব্যবসায়ী বাবুল মিয়াসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন।
উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান মরহুম ফজলুল করিম মোল্লার দৌহিত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ রুবেল মোল্লার পক্ষে ভোট চেয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন এবং রুবেল মোল্লার পক্ষে শ্লোগান দেন।
এক পর্যায় উপস্থিত সাধারণ জনতাও তার শ্লোগানে সুর মিলিয়ে মিলাদ মাহফিলকে নির্বাচনী প্রচারণায় পরিণত করে। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ধরণের প্রচারণায় নির্বাচন নিয়া জনমনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা নিয়ে আতংক ও ভীতির সঞ্চার হইয়াছে। ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লার মামা সাবেক জনপ্রশাসন সচিব বর্তমান (পিএসসি) সদস্য ফয়েজ মোল্লা তফসিল ঘোষনার শুরু থেকেই ভাগ্নকে বিজয়ী করার জন্য সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে শোকজের সম্মুখিন হন।
গত ৯ এপ্রিল ফয়েজ মোল্লাকে সর্তক করেন নির্বাচন কমিশন ইসি। তবুও খ্যান্তি হয়নি (পিএসসি) সদস্য ফয়েজ মোল্লা। বরং ভাগ্নে রুবেলের পক্ষে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সব ধরনের প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন (পিএসসি) সদস্য ফয়েজ মোল্লা।
অপরদিকে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ সরওয়ার হোসেন ভুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সমূহে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটানিং অফিসার বরাবরে গত ২১ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উক্ত লিখিত অভিযোগে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ সরওয়ার হোসেন উল্লেখ করেন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যায় ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র সমূহ যথাক্রমে ১৬৪নং পশ্চিম ভায়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪নং ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফজলুল করিম মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ভায়লা হাতেম আলী হালাদার বাড়ি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্র চারটি অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ।
উক্ত কেন্দ্র চারটিতে ঘোড়া মার্কার প্রার্থী রুবেল আহমেদের নেতৃত্বে সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণে বাধা, জাল ভোট প্রদান সহ নানা ধরনের নাশকতার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমার আনারস মার্কার সমর্থিত কর্মীদের বাড়িতে আগুন দেয়া, মাঝরাতে বাড়ি ঘর কোপানো সহ নানা ধরনের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ঘোড়া মার্কার প্রার্থী রুবেল আহাম্মেদের সন্ত্রাসী বাহিনী, যাহা বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা আছে। একই দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটানিং অফিসার বরাবরে গত ২২ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম সোহাগ।
এই প্রার্থী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন ইতিমধ্যে আমার সমর্থিত কর্মীদের বাড়িতে আগুন দেয়া, মাঝরাতে বাড়ি ঘর কোপানো সহ নানা ধরনের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ঘোড়া মার্কার প্রার্থী রুবেল আহাম্মেদের সন্ত্রাসী বাহিনী, যাহা বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা আছে। তাই উল্লেখিত ঝুঁকিপূর্ণ চারটি কেন্দ্র সহ উক্ত ইউনিয়নের নয়টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের বিশেষ টিমকে সম্পৃক্ত করার দাবী জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম সোহাগ।
এদিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ভুরিয়া তহসীল অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক মোঃ জাকারিয়া চৌকিদার ও পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক মোঃ আব্দুল্লাহ আল নোমান (সজিব আকন) চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লা নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহন সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম সোহাগ।
তিনি অভিযোগে তুলে ধরেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার ভূরিয়া তহসীল অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক মোঃ জাকারিয়া চৌকিদার ও পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক মোঃ আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে সজিব আকন দুজনই ১৩নং ভুরিয়া ইউনিয়নের ভোটার। তাহারা অফিস ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যে রুবেল আহম্মেদ এর ঘোড়া মার্কার নির্বাচন পরিচালনা করে আসছেন। যাহা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ২৫ (৩) ও ২৫(৫) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা আছে।
নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সময় মারামারি সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করা সহ সরাসরি ও তাদের ফেসবুক আইডিতে ভোটারদের হুমকি প্রদান করে। ঈদ উপলক্ষে সরকারী চাল বিতরনের সময় মারামারীর ঘটনায় ইতিমধ্যে মোঃ জাকারিয়া চৌকিদারকে আসামী করে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাহাদের এহেন কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। মোট কথা চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পাহাড়সম। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম সোহাগ ও আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ সরওয়ার হোসেন।
এবিষয়ে জানতে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লার নাম্বারে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন। রিটানিং অফিসার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃস্টির চেস্টাকারীদের বিরুদ্ধে ভ্র্যম্যমান আদালত বসিয়ে জেল জরিমানা প্রদান করা হবে।