• ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নেতা-কর্মীদের দল পাল্টানোর হিড়িক

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮, ১৮:৫৫ অপরাহ্ণ

এম ফোরকান ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী সমস্যায় রয়েছে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল। বিভিন্ন মামলাসহ নেতা-কর্মীরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ক্ষমতাসীন আ’লীগে যোগ দেওয়ার হিড়িকে মেতে উঠেছে। আ’লীগও কৌশলগত কারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা দল পাল্টে যোগ দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে, তাদের সে সুযোগ করে দিচ্ছেন অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। এরই মধ্যে বরিশাল-১, ২, ৪ ও ৫ আসনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশকিছু নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হাতে ফুল দিয়ে দল পরিবর্তনও করেছেন। এমনকি বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর হাতে ফুল দিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা দল পরিবর্তন করেছেন। যদিও এসব যোগদান নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন- বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যদলে যোগদান করানো হচ্ছে। এদিকে বর্তমানে বরিশাল জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে নিজেদের ক্ষমতার অনুকূল পরিবেশ পেয়ে প্রচারে এগিয়ে আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের নৌকার প্রার্থীরা। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কের মাঝে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। নানা সংকটের মাঝেই ঝিমিয়ে চলছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচার। বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে গত ২৯ নভেম্বর প্রথম প্রশাসনের পক্ষপাততুষ্টদের অপসারণ চেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। বরিশাল নগরের সদররোডে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান এবং বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ। এরপর ব্যাপক শো ডাউন দিয়ে বরিশাল-১ আসনে নির্বাচনী প্রচারে নামেন ধানের শীষের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন। গত ১৭ ডিসেম্বর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। যেখানে তিনি নির্বাচনী প্রচার মাঠে নিজের কোণঠাসা অবস্থান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ১০ পাতার লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন। যদিও এ সংবাদ সম্মেলনেই ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তার ক্ষমতামলে বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়টি আবারো সামনে চলে আসে। এদিকে ওইদিন বিকেলে বরিশাল-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে উজিরপুরে গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ তুলে ধরেন গণমাধ্যমের কাছে। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জে এম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। একইদিন মামালা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে নিজ বাসভবনে বরিশাল-৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার সংবাদ সম্মেলন করেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের দাবি, শুধু সংবাদ সম্মেলন নয়, তারা তাদের অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিএনপি নানা প্রতিকূলতার অভিযোগ করলেও আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা পুরোদমে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার। তবে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ), বরিশাল-৫ ( বরিশাল সদর) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে বাধা-বিপত্তির অভিযোগ ছাড়াই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এরমধ্যে বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসরিন জাহান রতœা নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করেই প্রচার চালাচ্ছেন।বরিশালের ৬টি আসনেই নির্বাচনী প্রচার পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশ চাঙ্গা মনোভাব নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বরিশাল-৩ আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আতিকুর রহমান ও বরিশাল-৬ আসনে সিংহ প্রতীকের মোহাম্মদ আলী তালুকদার। সার্বিক বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, নির্বাচনী পরিবেশের মধ্যদিয়ে গোটা জেলার ৬ আসনে সুন্দরভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বরিশালের সব আসনেই আমরা মহাজোট ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ে আশাবাদী। আমরা প্রত্যাশা করি আশানুরূপ ফলাফলের মধ্যদিয়ে বিজয় হবে। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে আত্মকলহ রয়েছে, রয়েছে সমঝোতার অভাব। শুরুতেই বরিশালের সব আসনে তারা ২ জন করে প্রার্থী দিয়ে এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আমার মনে হয়, যেখানে যা ঘটছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কোনো বিষয় নেই জানিয়ে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় নামতে পারছে না। একদিকে পুলিশ গ্রেফতার করছে, অপরদিকে হামলার শিকার হচ্ছে। আমরা সভা-সমাবেশ করতে চাচ্ছি। পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ক্ষমতাসীনদের কর্মী বাহিনীর হামলা বন্ধ করাসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু বলেন, পুলিশ ক্ষমতাসীনদের প্রটোকল দিচ্ছে আর আমাদের গ্রেফতার করছে। আমরা প্রচার চালানোর তেমন কোনো সুযোগই পাচ্ছি না। তবে ভোটের দিন যদি মানুষ সঠিকভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে বিজয় আমাদের নিশ্চিত। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে অসম্ভব, তার প্রমানই এখন মাঠে ময়দানে দেখতে পাচ্ছি আমরা। অতীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হয়েছে তখন সব দলই মাঠে সমানভাবে প্রচারে সরব ছিল। কিন্তু এবার দেখছি ক্ষমতাসীনরাই একতরফাভাবে সরব, আর ক্ষমতার বাইরের দলগুলো পুলিশ আতংকে নিজেদের ঘরেও ঘুমাতে পারছেন না। সুষ্ঠু ভোট হলে বরিশালের ৬টি আসনের অন্তত চারটি আসন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা পাবেন বলে মত দেন বেশ কয়েকজন ভোটার।