এস.এন পলাশ॥ বরিশাল নগরীর প্রান কেন্দ্রেই প্রান সংশয়ের আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। ৭ তলা নির্মানাধীন ভবনের ৫৬ ফুট পিলার স্থাপনকালে হঠাৎ আকস্মিক ভূকম্পনে অন্যান্য ভবনে দেখা গেছে ফাটল। গতকাল নগরীর প্রান কেন্দ্র সদররোডস্থ বরিশাল সিটি কলেজের ভবন নির্মানের চলমান কাজের সময় ৫৬ ফুট পিলার বসানোর সময়ে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোতে ফাটলের সৃষ্টি হয়। আর সে সময় আতংকিত হয়ে উপস্থিত সকল ভবন থেকে তড়িৎ গতিতে রাস্তায় নেমে ছুটতে থাকে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা কলেজ ভবন নির্মানের চলমান কাজ বন্ধ করে দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অবহিত করে। ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী আখতারুজ্জামান হিরু বরিশালে না থাকায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর রোষাণলে কর্তৃপক্ষ একটি পিলার বসিয়ে সাময়িক কাজ বন্ধ করে দেয়। জানা গেছে, বরিশাল নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের বিপরীতে থাকা বরিশাল সিটি কলেজের উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ৭ তলা ভবনের কাজ গতকাল দুপুরে শুরু করা হয়। এসময় কাজের প্রথম পর্যায়ে ৫৬ ফুট পিলার বসানোর কাজ শুরু করলে এলাকা জুড়ে কম্পনের সৃষ্টি হয়ে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলো সহ এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় এমনকি পাশ্ববর্তী কয়েক ভনগুলোতে ফাঁটল দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ জনতা পরবর্তীতে নির্মানাধীন কাজের স্থানে গিয়ে দায়িত্বরত লোকদের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর রোষানল দেখে একটি পিলার বসিয়ে কাজ সাময়িক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ভবন নির্মান কাজের কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে জানা গেছে, বরিশাল কলেজের ৭ তলা ভবনের চলমান কাজ সম্পূর্ণ করতে মোট ৬০টি পিলার ৫৬ ফুট গভিরে বসাতে হবে। গতকালই একটি বসানোর পর আরও ৫৯টি পিলার এখনও বসাতে হবে। এদিকে এই পিলার বসানো ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পিলার বসানোর কাজ সারাদেশে বন্ধ রয়েছে। এমনকি বরিশাল নগরীর কাটপট্টি রোডের একটি ভবন তৈরীতে একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু করায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে বন্ধ করে দেয়। আসলে বর্তমানে বহুতল ভবন তৈরী করতে সিটুপাইল ব্যবহার করার কথা থাকলেও অনেকেই ওই নিয়ম না মেনে পিলার পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে ঝুকিপূর্ণ ভাবে তৈরী করা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে প্রানহানীর মতো ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেছে সচেতন মহল। এ ব্যাপারে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও মাটি বিশেষজ্ঞ সোয়েব চৌধুরী সুহান বলেন, সিটুপাইল বাদ দিয়ে পিলার পদ্ধতিতে ভবন তৈরীতে অতিরিক্ত মাত্রায় মাটিতে কম্পনের সৃষ্টি হয় যা বিপদজনক। এতে কাজ করার পাশ্ববর্তী ভবনগুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ফাটলের পাশাপাশি ভবন ধ্বসের মতো ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় একাধীক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, প্লান বর্হিভূতভাবে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মানের কাজ করার ফলে কম্পনের সৃস্টি হয়ে অন্যান্য ভবনে ফাঁটল ধরেছে। অপরদিকে আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং কমিটি বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় ভাগই নিজেরা বন্টন করে নেয়ায় ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী আর যেনতেন ভাবেই ৭ তলা ভবনের কাজ শুরু করাতেই এমনটা হয়েছে। এ বিষয়ে ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী মো আকতারুজ্জামান হিরু দেশ জনপদকে জানায়, তিনি বরিশালে নেই তবে ঘটনাটি তিনি শুনেছেন কিন্তু সরেজমিনে যেতে পারেন নি। তিনি কলেজ কমিটি’র সভাপতি বিষ্ণু ঘোষের সাথে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলের সাথেও কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। কথার এক প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা আছে। কিন্তু এ সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলোর মালিকরা নিজ থেকেও অপসারণ করছে না, আবার কর্পোরেশনকেও সহায়তা না করে নানান জটিলতার সৃষ্টি করে তুলছে। তবে তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে কাজ শুরু করার বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবার জন্য বলে দিয়েছেন।