• ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নগরীতে দোকানের আড়ালে মাদকের সিন্ডিকেট

admin
প্রকাশিত মার্চ ৩, ২০১৯, ০৪:০০ পূর্বাহ্ণ
নগরীতে দোকানের আড়ালে মাদকের সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে একমালিকানা কারবারের নেপথ্যে চলছে ইয়াবা, ফেন্সিড্রিলের জমজমাট বিকিকিনি। আইনসংস্থাকারী বাহিনীর হাতে একাধিকবার আটক হলেও কিছুদিন পর স্ব-পদে মাদক ব্যবসা শুরু করছে। অপরদিকে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকবিরোধী কঠোর অভিযানের মধ্য দিয়ে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও মাদক আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর পরিণতির চিত্র হতাশাজনক। দেশে প্রচলিত যে কোনো আইনের চেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হলেও বেশিরভাগ মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আইনি সীমাবদ্ধতা, সাক্ষীর অভাব এবং মামলা নিয়ে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যের কারণেই অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সূত্রমতে, থ্রি এস পেষ্টিশপ এর মালিক মাহাদি হাসান রনির নগরীতে রয়েছে তিনটি দোকান। একটি দক্ষিণ সদর রোডে, একটি নতুন বাজারে ও অপরটি বিএম স্কুল রোডে। এসব দোকানের ব্যবসায়ী কার্যক্রমের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত পাইকারীভাবে ইয়াবা বিক্রি করে আসছে। এতে থানা পুলিশের হাতে মাহাদি হাসান রনি একবার আটক হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। যদিও লবিং-তদ্বিরে ৮১ ধারায় আদালতের মাধ্যমে একদিনের মধ্যে বের হয়ে পুনরায় ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মাহাদি হাসান রনির ০১৬৮৭১০৫….. নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে গীর্জা মহল্লার লাকি গার্মেন্টস’র মালিক জনাব লাল মিয়ার ছেলে হিরু দীর্ঘদিন ফেন্সিড্রিলের ব্যবসা করার পর পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে এই ব্যবসায়ী হাজতে থাকায় তার মাদক ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি গীর্জা মহল্লায় নিউ কালেকশন বোরকা হাউজ এর মালিক ঝালকাঠী নিবাসী শাকিল খান সেন্টু ও তার ভাই শাহ আলম খান ইয়াবা, ফেন্সিড্রিলের পাইকারী ডিলার। নিজ এলাকা ঝালকাঠীতে ব্যবসায়ী কার্যক্রম করায় প্রশাসনের নজরদারীতে আসলে একাধিকবার আটক হয়। পরবর্তীতে ঝালকাঠী থেকে এসে নগরীর গির্জা মহল্লা এলাকায় বোরকা হাউজ এর ব্যবসা শুরু করে। এখানেও সে ওপেন সিক্রেটভাবে ইয়াবা ফেন্সিড্রিল পাইকারী বিক্রী করে যাচ্ছে। যদিও ডিবি ও থানা-পুলিশ বিষয়টি টের পেয়ে একাধিকবার গ্রেফতার করেন। বর্তমানে বোরকা হাউজটি মাদক বিক্রি’র দোকান হিসেবে পরিচিত লাভ করায় সেন্টু নিজেই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। কিন্তু থেমে নেই সেন্টুর ইয়াবা ও ফেন্সিড্রিল বিক্রি। শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে গোপনে বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে। এদিকে শ্রী দূর্গা ষ্টোর’র মালিক অলোক বরিশালের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় ফেন্সিড্রিলসহ আটক হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে মাদক মামলায় জামিনে বের হয় অলোক। বর্তমানে শ্রী দূর্গা ষ্টোর এর পণ্য বিক্রির আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একাধিকবার গ্রেফতার হওয়ার কারনে আইনের চোখের অন্তরালে অবৈধ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শ্রী দূর্গা ষ্টোর এর সত্ত্বাধিকারী অলোক বলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালে জামিনে বের হয়েছি, এরপর আর মামলা মোকদ্দমায় জড়াইনি। সূত্র জানায়, ইয়াবা বহন করা সহজ বিধায় কোন রকম ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই গোপনে অলোক ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে চকবাজার জোনাকী মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী বাকলার মোড় এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন ইয়াবা-ফেন্সিড্রিলের ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে ইলিয়াস আটক হয়। গত ২৭ ফেব্র“য়ারী জামিনে বের হয়। মাত্র হাতেগোনা কটা দিনের ব্যবধানে আবারো জড়িয়ে পরে মাদক ব্যবসায়ে। এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদ বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। তাতে নেতা, ব্যবসায়ী, নারী, পুরুষ কাউকেই ছাড় দেয়া হয় না। নগরী থেকে মাদক ব্যবসায় জিরো টলারেন্স ঘোষনা করা হয়েছে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নগরীতে হাতে গোনা ৫/৭ টি এক মালিকানা ব্যবসায়ী তাদের নির্দিষ্ট ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট তৈরী করার ব্যাপারে নগর গোয়েন্দা পুলিশ’র এসি মোঃ নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, মাদক ব্যবসা যত সিক্রেটভাবেই করুক না কেন আমার গোয়েন্দা বাহিনী তাদেরকে আটক করবেই। একমালিকানা কারবারের নেপথ্যে যারাই মাদক ব্যবসায় জড়িয়েছে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এতেও যদি তারা সংশোধন না হয় গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে, সঠিক তথ্য প্রমানাদি পেলেই ওইসব ব্যবসায়ীদের আটক করা হবে। আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত রয়েছে।