মুহাম্মদ শাহজালাল হাওলাদার ॥ প্রত্যেক মুসলিম নরনারী প্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার জন্য যাকাত ফরজ করা হয়েছে। তবে এই সম্পদের মেয়াদ কমপক্ষে এক বছর অতিক্রম করতে হবে তাহলেই ওই সম্পদের যাকাত ফরজের বিধান অপরিহার্য এবং বাধ্যতামূলক। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র হওয়া এবং বৃদ্ধি পাওয়া আর পবিত্র এবং বৃদ্ধির মধ্যেই ধনির সম্পদে গরিবের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে মহান সৃষ্টিকর্তা।
এক্ষেত্রে সম্পদের পরিমাণ হতে হবে ৭.৫০ ভরি স্বর্ণ অথবা ৫২.৫০ ভরি রুপা সমপরিমাণ অর্থ এর বর্তমান বাজার বিক্রয় মূল্যের উপরে শতকরা ২.৫০% হারে যাকাত প্রদান করতে হবে। মহাগ্রন্ত আল কুরআনের বিধান অনুযায়ী যাকাত বন্টনের খাত ৮টি যথাক্রমে
১. ফকিরঃ নিঃসম্বল ভিক্ষা প্রার্থী। সবকিছু হারিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য যিনি ভিক্ষাবৃত্তি করছেন তাকে পুনবাসনের জন্য যাকাত প্রদান করতে হবে।
২. মিসকিনঃ মিসকিন হলো ওই ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না কারও কাছে হাত বাড়াতে পারে না বাহ্যিকভাবে তাকে মনে হয় সে সচ্ছল তাকেও যাকাত প্রদান করতে হবে।
৩. যাকাত আদায়কারী ও হেফাজতকারীঃ যাকাত আদায়কারী ও হেফাজতকারীকে ও যাকাত প্রদান করতে হবে কেননা তিনি এই কাজই নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন এবং তার সময় এখানে ব্যয় করেন এই জন্য কোরআনের বিধান অনুযায়ী তাকে যাকাত দিতে হবে।
৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমদেরঃ মহান আল্লাহ তায়ালার কোরআনের বিধি বিধান সার্বজনীন এবং সমস্ত মানব সকলের জন্য এই কোরআন নাযিল করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েতের জন্য। এজন্য সুফল তুলে ধরার জন্য এবং প্রতিবেশী বা অন্য কোথাও যদি অমুসলিমদের যাকাত দিতে হয় শেখানেও যাকাতের বিধান রয়েছে।
৫. দাস মুক্তির জন্যঃ পৃথিবীর কোথাও যদি কোন মুসলিমকে লিখিতভাবে দাসী করা হয় এবং তাকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে মুক্তির শর্ত রয়েছে সেখানে যাকাত প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। যাকাত প্রদান এর মাধ্যমে তাকে দাসী থেকে মুক্তি করতে হবে এবং তাকে স্বাধীন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যাকাতের অর্থের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিঃ ব্যবসা-বাণিজ্য বা নানা কারণে মুসলিম ব্যক্তি ঋণের কারণে হাবুডুবু খাচ্ছে তাকে যাকাত প্রদান এর মাধ্যমে ঋণ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. আল্লাহর রাস্তায়ঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ যাকাত প্রদানের খাত। মহাগ্রান্ত আল কুরআন এর বিধান অনুযায়ী আল্লাহ বলেছেন হে মুমিনগণ আমি কি তোমাদেরকে একটি ব্যবসার কথা বলব না যে ব্যবসাটি তোমাদের জাহান্নাম নামক কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে সেই ব্যবসাটি তোমরা শুনে নাও তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ)প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ কর এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
আরও সরল কথা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ১৩টি ইসলামী রাজনৈতিক দল রয়েছে এদের সকলের কাজ কোরানের বিধান কায়েম করা। আর এই সংগঠনের যাকাত তহবিলে যাকাত প্রদান করার বিধান রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় যেখানে এতিম মিসকিন এবং গরিব নিঃস্ব মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে কোরআন হাদিস শিক্ষা করে এখানেও যাকাত প্রদানএর বিধান রয়েছে
৮. মুসাফিরঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি দীর্ঘ সময় সফরের কারণে নিজের পুঁজি শেষ হয়ে গেছে তাকে যাকাত প্রদান করা শরিয়াতের বিধান রয়েছে। তার অবস্থা ধনী হলেও তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। কেননা তিনি মুসাফির।
মাহে রমজান হচ্ছে কুরআনের বসন্তকাল এই মাহে রমজানে কোন দান অনুদান এবং যাকাত প্রদান করলে অগনিত সওয়াব পাওয়া যায়। তাই সকল মুসলিম নর-নারীর উচিত যাকাত ফিতরা এবং দান অনুদানের হাত প্রসারিত করা। তাহলেই আমাদের ইহকালীন কল্যাণ লাভ আল্লাহর খুশি এবং পরকালীন জীবনে মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে সবার আগে আমাদের নিজেদের পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে তারপরে প্রতিবেশী তারপরে সমাজ তারপর রাষ্ট্র তাহলেই আমাদের স্বপ্নটা একটা কল্যাণমুখী স্বপ্নে পরিণত হবে।