নিজস্ব প্রতিবেদক: চিকিৎসাসেবার সুযোগে টানা চার বছরের রোগী প্রতারণা দেখা গেছে নগরীর সদর হাসপাতালে। কমিশন হাতানোর লোভে এহেন কর্মকান্ডের মুলহোতা হাসপাতালটির অর্থোপেডিক্স বিভাগের জুনিয়র কনস্যালট্যান্ট ডা: শফিকুল ইসলাম। কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া থেরাপিস্টের নাম সম্বলিত প্যাডে রোগী রেফার করছেন তিন বছর ধরে। অথচ রোগীরা জানতেই পারছেননা ডা: শফিকুল যেই থেরাপিস্টের নামে টিক দিয়ে পাঠিয়েছে সেই থেরাপিস্ট আদৌ এখানে নেই। এনিয়ে অনুসন্ধানসুত্রে আরো জানা গেছে,সারমিন সুলতানা ডিপ্লোমা থেরাপিস্ট, শেবাচিম হাসপাতাল নামে একটি প্যাডে নগরীর একটি প্রাইভেট থেরাপি সেন্টারে প্রতিদিন রোগী প্রেরণ করেন চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম। চলতি বছরের মার্চ মাসের ৫ তারিখ সজিব নামের এক রোগীকে ঔ থেরাপি সেন্টারে পাঠায় উক্ত চিকিৎসক। কিন্তু ঔ নামে কোন থেরাপিস্ট ওখানে নেই। বরং চার বছর আগে ঢাকায় চলে গেছেন। কিন্তু তার নামে বছরের পর বছর কেন রোগী পাঠানো হয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে ডা: শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি তো জানিনা যে ওখানে ওই থেরাপিস্ট নেই। জানলে তো পাঠাতাম না। কিন্তু সরকারি থেরাপির ব্যবস্থা থাকার পরও সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা অবস্থায় প্রাইভেট থেরাপি সেন্টারে কেন রোগী রেফার করেন। এসময় তিনি আরো বলেন, শেবাচিম হাসপাতাল দুরে হওয়ায় রোগীরা যেতে চায়না। কিন্তু এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে একাধিক সুত্র জানায়, থেরাপির জন্য রোগী প্রতি যে বিল হয় তার ১৫% কমিশন দেয়া হয় তাকে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দৈণিক প্রায় শতাধিক রোগী আসে সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিতে। এসুযোগে সে প্রতিদিন অন্তত অধিকাংশ রোগীর সাথে এ প্রতারণা করেন। শুধু তাই নয় প্রায় প্রত্যেকে রোগীকে আলট্টা সাউন্ড থেরাপি টঝঞ সর্ট ওয়েব থেরাপি ঝডঞ দিয়ে থাকে। এনিয়ে ডা: শফিকুল ইসলাম বলেন, এই দুিিট থেরাপি দেয়া হয় কারণ এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম। কিন্তু এদিকে এনিয়ে একাধিক থেরাপিস্ট বলেন, দুটিই হিট (তাপ) উৎপাদন করে। সেক্ষেত্রে সকল রোগীকে এই একই থেরাপি দিতে হবে এটা অবশ্যই অপচিকিৎসা। সুত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী প্রত্যেক ফিজিওথেরাপিষ্ট প্রথমেই রোগীর ফিজিক্যাল এ্যাসেসমেন্ট করবে এরপর ফিজিওথেরাপির জন্য প্লান তেরী করবে এবং পরবর্তীতে রোগীর ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করবে। এতে মানুষের চলাচল ক্ষমতা, ব্যথা, দুর্ঘটনা জনিত কারণে শারীরিক অক্ষমতাসহ অন্যান্য শারীরিক মেকানিক্যাল সমস্যার উন্নতি বা সাড়িয়ে তুলবে। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিষ্ট যে প্রশস্ত শারীরিক চিকিৎসা প্রয়োগ করেন তার মধ্যে এক্সারসাইজ, মবিলাইজেশন, ম্যানুপুলোশন, ইলেকট্রিক ইস্টুমুলেশন ও বিভিন্ন ওয়েভ ফরমে তাপ যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, শর্ট ওয়েভ, মাইক্রওয়েভ, ইন্ফ্রা রেড রেডিয়েশন, ওয়ক্স, লেজার ইত্যাদি ব্যবহার করেন। শুধুমাত্র ফিজিওথেরাপিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সাধারণ শারীরিক সমস্যায় ডাটা তৈরি ও রোগ প্রতিরোধ প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করে। থেরাপি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা আবলম্বন করা খুবই জরুরী কারন প্রতিটি থেরাপিউটিক এজেন্ডের নিদৃষ্ট মাত্রা, সময় ও শরীরের নিদৃষ্ট স্থান নির্নয় করেই প্রয়োগ করতে হয় এবং রোগের ধরন অনুযায়ী থেরাপির ও মাত্রা নির্নয় হয়। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত একাধিক তাপ প্রয়োগে সুফলের চেয়ে ক্ষতি হয়ে থাকে বেশি। এর ফলে রোগীর পেশী ও নার্ভ স্থায়ীভাবে অকার্যকর হতে পারে এবং এ ধরনের অপচিকিৎসার কারনে প্রতিনিয়ত কিছু রোগী ফিজিক্যাল বার্ণের শিকাড় হচ্ছে। এদিকে এনিয়ে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিউদ্দিন মামুন (ফিজিওথেরাপিস্ট) বলেন, পুর্ণাঙ্গ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাপত্র একজন থেরাপিস্ট তৈরী করবে। কারণ থেরাপিজনতি চিকিৎসা বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেই থেরাপিস্ট হয়েছেন। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক সরাসরি একজন থেরাপিস্টকে রোগী রেফার করবেন। কিন্তু এধরণের নিয়মের ব্যতয় হরহামেশাই দেখা যায়। এনিয়ে ভুক্তভুগী সুত্র জানায়, বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উলানিয়া এলাকার গৃহীনী আমেনা (৪০) নগরীর একটি থেরাপি সেন্টারে গেলে অপচিকিৎসার শিকার হয় গতবছর। এতে তার বাম পার পাতা পুরে যায়। অপরদিকে নগরীর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা প্রতারণার ব্যাপারে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন বলেন, এটা একধরণের প্রতারণা। যে কর্মস্থলে নেই তার নাম ব্যবহার করে রোগী রেফার করা এটা কোন বিবেকে উনি করছেন তা বোধগম্য নয়। আর যেখানে শেবাচিম হাসপাতালে সরকারি থেরাপিস্ট রয়েছে সেখানে তিনি কেন প্রাইভেট থেরাপি সেন্টারের নামে রেফার করবে। তাও আবার সদর হাসপাতালে রোগী দেখার সময়। এটা অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।