• ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গহনায় রূপবদল

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৩, ২০২০, ১৪:৩৮ অপরাহ্ণ
গহনায় রূপবদল

গহনা ছাড়া নারীর সাজ পূর্ণ হয় না। কুন্দন, মিনাকারি, মুক্তা কিংবা পাথর সেটিংস রুপা বা সোনার পানিতে ধোয়া রুপার গহনা এ সময়ের ট্রেন্ড। বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রণ কিংবা ঘরোয়া দাওয়াতে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রুপার গহনা বেছে নিতে পারেন। শুধু শাড়ির সঙ্গেই নয়, প্যান্ট টপ কিংবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গেও চলে এ ধরনের গহনা। লিখেছেন ফারাহ বিলকিস

গহনার নকশায়ও ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। ম্যাট, অক্সি, কপার কালারের চল এখন বেশি। রুপার ওপর মিনা করা গহনা, মুক্তা, জাংক জুয়েলারিও আছে। আবার মেটালের গহনার মধ্যে হাতে আঁকার ট্রেন্ড চলছে। কাঠের ওপর হাতে আঁকার গহনার পাশাপাশি এতে যুক্ত হচ্ছে রুদ্রাক্ষ, পুঁতি, কড়ি ও হাড়।

ধরন

গহনায় আছে নানা ধরন। রুপার মধ্যে দুটি কালার একটি সাদা, আরেকটি কোরপস করে অক্সিডাইড করা। এটি দুই ধরনের হয়। একটি বেইজড মেটাল, আরেকটি কেশব মেটাল। কপার বা তামার গহনাকে বলে বেইজ মেটাল। রুপাকে অক্সিডাইড করলে সেটা অ্যান্টিক হয়ে যায়। সেটা কেশব মেটাল। দেখতে অনেকটা কালচে। তাই এটি সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ওয়েস্টার্ন আউটফিটে বেশির ভাগই ডার্ক কপার, অ্যান্টিক ব্রাজড বা অ্যান্টিক পলিস, সিলভার এগুলো ভালো মানায়। রুপার গহনার দোকানে এমন অসংখ্য ডিজাইনের গহনাই বেশি। আজকাল বিয়ের গহনা হিসেবে সোনার পাশাপাশি এগুলোও অনেকে পরছেন। গোল্ডপ্লেট গহনার মধ্যে আছে টিকলি, সিতাহার, মানতাসা, রতনচূড়, ঝুমুর, মাথার মুকুট, খোঁপার ক্লিপ, পায়ের নূপুর, কোমরের বিছা ইত্যাদি।

এসব গহনায় অনেক ধরনের নকশার কাজ দেখা যায়। গহনার নকশায় জ্যামিতিক আকৃতির পাশাপাশি আছে মুখের অবয়ব, পাখি, প্রজাপতি ইত্যাদি। পুঁতি বিডসের গহনাও নানা ধরনের পাওয়া যাচ্ছে।

বেলাল সিলভার হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. বিলাল হোসেন জানান, ‘এখন হালকা বা ভারী দুই ধরনের গহনাই চলছে। তাই দুই ধরনের গহনাই পাবেন আমার শপে। এই গরমে সবাই হালকা গলার মালা কিংবা দুল চান। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা নেপালি ট্রাইবাল গহনারও খোঁজ করেন। সিঙ্গেল গহনা হিসেবে কানপাশা, দুল, মাকড়ি, চুড়ি, ব্রেসলেট, বালা, পায়েল, বাজু, হাতের আংটি, পায়ের আংটি, চুলের কাঁটাসহ নানা ধরনের গহনা আছে। আরও আছে ইয়োকের গহনা, মাটির লকেটের সঙ্গে কাপড়ের মালা কিংবা কড়ি।’

জনপ্রিয় অনলাইন গহনার পেজ রঙবতীর স্বত্বাধিকারী ফাহিমা বিনতে ইব্রাহিম বলেন, ‘আজকাল মেয়েরা যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই গহনা পছন্দ করেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েদের কাঠের বিডস্, ফেল্ট ফেব্রিকস, মেটালের তৈরি গহনা পরতে দেখা যায়। গহনার সব ম্যাটেরিয়াল বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। ফলে ইন্ডিয়া, চায়না, নেপাল থেকে আনাতে হয়। তাই দাম একটু বেশিই হয়। তবে সবাই একটু ইউনিক গহনাই বেছে নিচ্ছেন। আমরাও ডিজাইন করার সময় ট্রেডিশনাল গহনার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’

অনলাইন গহনার পেজ ত্রিনিত্রির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার অন্বেষা দত্ত জানান, ‘হ্যান্ডপেইন্টেড গহনায় সব সময় দেশীয় কিছু ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। সেই প্রথম থেকেই দেশীয় ফুল, বিভিন্ন পটচিত্র কাঠের গহনায় তুলে আনার চেষ্টা ছিল। এখন পূজা উপলক্ষেও দেশীয় আঙ্গিকে কিছু করার আগ্রহ থেকে আমরা পটচিত্রের আদলে, মনিপুরী ঐতিহ্যবাহী আদলে দুর্গা করেছি। নকশায় ইদানীং নিজেদের মৌলিক ডিজাইনকে প্রাধান্য দিই। একটা থিম কল্পনা করে সেটাকে গহনায় নিয়ে আসার চেষ্টা করি। ভালো লাগে মৌলিক ডিজাইনে কাজ করতে। গলার মালা, কানের দুল, চুড়ির সঙ্গে হ্যান্ডপেইন্টেড ফিঙ্গার রিংও আছে।’

গহনার বাজার ঘুরে দেখা গেল অনেকে বালা, সিঙ্গেল চুড়ি ও ব্রেসলেট পরতেও পছন্দ করেন। বিশেষ করে চুড়ির নকশায় চুড়ি বা ব্রেসলেটে কড়ি, বিডস্, সুতা, হাড়, পুঁতিও দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আফগানি দুল ও নেপালি মালার চাহিদা আছে। আরও আছে বাহারি নথ ও বাজুবন্ধ। দেশি ফ্যাশন হাউজ ও জুয়েলারি শপগুলোতে ক্রেতার পছন্দমতো বিভিন্ন ডিজাইনের ধাতু কিংবা সুতা, কাপড়, পুঁতি ও কাঠের গহনাও আছে। ‘সব সময়ের জন্য রুপার ছোট ঝুমকা, কানের দুল ও রুপার ওপর পলা বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে কাঠ, সুতা, পুঁতি কিংবা অন্যান্য ধাতু তো আছে’ জানালেন জুয়েলারি শপ কে. জেড মার্টের বিক্রয়কর্মী শাহিন।

রুপায় গোল্ডপ্লেটেড পাথর বসানো আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট, গলার হার ইত্যাদির ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে সব সময়ের জনপ্রিয় রুপার মল তো আছেই। বাজারে অক্সিডাইজ রঙের রুপার মলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অনেক ছেলে রুপার ব্রেসলেট ও কানের রিংও পরছে।

বিয়ের সাজে নতুনত্ব আনতে এখন অনেকেই রুপার গহনা পরছেন বিয়ে কিংবা বউভাতে। এই গহনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোনো ধরনের পোশাকের সঙ্গেই তা ব্যবহার করা যায়। তবে কোন পোশাকের সঙ্গে কোন গহনা ব্যবহার করবেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রুপার গহনা সাধারণত লাল, কালো ও সাদা রঙের পোশাকের সঙ্গেই ভালো মানায়। এক রঙের প্লেন শাড়ির সঙ্গে রুপার ভারী গহনা পরতে পারেন। জমকালো সালোয়ার-কামিজ ও ফতুয়ার সঙ্গেও রুপার বড় দুল দেখতে ভালো লাগবে। পায়ে পরতে পারেন নানা ধরনের আংটি ও মল ও খাড়ু।

কোথায় পাবেন

রুপার গহনা বললেই প্রথমে চলে আসে আড়ংয়ের কথা। নানা ধরনের রুপার গহনা পাবেন এখানে। রুপার মল, নাকফুল, আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট থেকে শুরু করে গলার হার পর্যন্ত নানা নকশার গহনা পাওয়া যাবে। দাম নির্ভর করবে গহনার ধরনের ওপর।

ফ্যাশন হাউজ অঞ্জন’সে পাবেন গহনার ডিজাইনার কনকের আধুনিক ডিজাইনের রুপার গহনা। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, গাউছিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা, মেট্রো শপিং মলেও পাবেন নানা ধরনের গহনা। আর চাইলে নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন জুয়েলারি থেকে। নানা ধরনের উৎসব ঘিরে মেলাও হয়। সেখানেও পছন্দমতো গহনা পাওয়া যায়। আর হাতের নাগালে হকার্স মার্কেট, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট তো আছেই। ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, মাদুলি, শৈলী তৈরি করছে হরেক রকমের গহনা। অনলাইনেও দেশি, ইন্ডিয়ান, নেপালি গহনাও কিনতে পারবেন।

দরদাম

ডিজাইন ও আকারভেদে রুপার নাকফুলের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কানের দুল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বালা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। টিকলি দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। ব্রেসলেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, খাড়– ও বাজু ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, মাদুলি সেট আড়াই হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। গহনার সেট কিনতে খরচ হবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে জাঁকজমকপূর্ণ গহনার সেট কিনতে হলে খরচ করতে হবে ৫০ হাজার টাকার বেশি। হ্যান্ডপেইন্টেড কাঠের গহনা কিনতে পারবেন কানের দুল ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে, গলার মালা ২০০ থেকে ৭০০ টাকা। আংটি ১২০ থেকে ২০০, হাতের চুড়ি সিঙ্গেল পিস ২০০ থেকে ৪০০ মধ্যে। পুরো সেট কিনতে পারবেন ৪০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।