• ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গলাচিপায় কৃষকের স্বপ্ন সন্তান গ্রাম পুলিশ হবে

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত মার্চ ৩, ২০২৪, ২০:৫১ অপরাহ্ণ
গলাচিপায় কৃষকের স্বপ্ন সন্তান গ্রাম পুলিশ হবে

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃপটুয়াখালীর গলাচিপায় কৃষকের স্বপ্ন সন্তান গ্রাম পুলিশ হবে। কৃষক হচ্ছেন মো. আমির হোসাইন (৭০) উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বাজারের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মো. আমির হোসাইন ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে ৫ জনের সংসার। গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও উপক্ষিত থাকে সবার কাছে। গ্রামের মানুষের উপকার কীভাবে করা যায় এই চিন্তা ঘুরপাক খেতে কৃষক মো. আমির হোসাইনের মনে। কিন্তু অভাবের সংসার কীভাবে মানুষের উপকার করবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না। বড় ছেলেকে টাকার অভাবে পড়ালেখা বেশীদূর করা পারেন নি। তার বড় ছেলে মো. রাসেল এখন ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে কাজ করে। মেয়েকে বিবাহ দেন। পরে ছোট ছেলে মো. মাসুদ রানাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন মো. আমির হোসাইন। ঠিক করলেন ছোট ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে গ্রাম পুলিশ বানাবেন। যাতে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তাদেরকে সচেতন করতে পারেন সরকারি বিভিন্ন সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে।

যেই ভাবা সেই কাজ। ছেলেকে উলানিয়া হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পরে ভর্তি করেন ঢাকার একটি কলেজে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এরই মধ্যে জানতে পারেন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দেয়া হবে। ছেলেকে দিয়ে আবেদন করালেন। গ্রাম পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষাটাও ছেলে দিয়েছে খুব ভালোভাবে। এখন অপেক্ষার পালা কবে জানা যাবে যে ছেলে গ্রাম পুলিশে নিয়োগ পেয়েছে। এ বিষয়ে আমির হোসাইন বলেন, আমার বয়স ৭০ হয়ে গেছে। এখন আর কাজ করতে পারি না। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছে। গ্রাম পুলিশে নিয়োগ পেলে গর্ভে আমার বুক ভরে যাবে। কেননা শুনেছি উপজেলা ইউএনও স্যারে খুবই ভালো মানুষ এবং সৎ লোক। সবার কাছেই তার প্রশংসা শোনা যায়। তার মত ভাল মানুষ আছে বলেই আমরা গরীবরা স্বপ্ন দেখি। আমাদের মত লোক টাকা দিয়ে চাকুরি নিতে পারবে না। অনেকের মুখেই শুনি চাকুরি নিতে টাকা লাগে। কিন্তু আমার ছেলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছে। আমি কাউকেই এক টাকাও দেই নিই এবং দিতেও পারবো না। এ বিষয়ে আমির হোসাইনের স্ত্রী মোসা. সাজেদা বেগম বলেন, ছোট ছেলে মাসুদ রানাকে গ্রাম পুলিশ বানাবে বলে আমার স্বামী সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু আমাদেরতো কোন টাকা পয়সা নেই। আমার স্বামী একজন সাধারণ কৃষক। লোক মুখে শোনা যায় উপজেলার স্যারে অনেক ভালো মানুষ। সে আছে বলেই আমরা অনেক ভরসা পাচ্ছি। আমি আল্লাহর কাছ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বলি আল্লাহ তুমি স্যারকে সুস্থ রেখো, ভালো রেখো। মো. আমির হোসাইনের ছোট ছেলে মাসুদ রানা জানান, তার পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে। মেধা তালিকায় তার নাম থাকবে বলে তার বিশ^াস। তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যারে ভালো মানুষ। তিনি আছেন বলেই আমি ভরসা পাচ্ছি। এ বিষয়ে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন ও মহিলা সংরক্ষিত আসনের রুমা বেগম বলেন, আসলেই কৃষক আমির হোসাইনের ছেলে মাসুদ রানা খুবই বিনয়ী ও ভালো ছেলে। তার মত ছেলে গ্রামে খুব কম আছে। তারা গরিব মানুষ। মাসুদ রানার চাকুরিটা হলে পরিবারটি অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে। চাকুরিটা ওরই প্রাপ্য। এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল মোল্লা ও সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মস্তফা খান বলেন, ছোট বেলা থেকেই ওর পরিবারকে চিনি।

ওর বাবা একজন বৃদ্ধ মানুষ এবং কৃষক। মাসুদ রানা একটি ভালো ছেলে। ওর গ্রাম পুলিশে চাকুরি হলে গ্রামের সকল মানুষ খুশি হবে কেননা ও গরিব মানুষ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, গ্রাম পুলিশে নিয়োগ চলছে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। মেধা তালিকার মাধ্যমে চাকুরি দেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. শাহিন শাহ বলেন, আমির হোসাইন ইউনিয়ন আ’লীগ এর একজন সক্রিয় কর্মী। তার ছেলের চাকুরি পেলে আমরা আনন্দিত। কেননা গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। এ বিষয়ে ১১৩ পটুয়াখালী-৩ গলাচিপা-দশমিনা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা বলেন, আমির হোসাইন একজন সাধারণ কৃষক ও দলীয় লোক বটে। গরিব মানুষ। তার ছেলের চাকুরি হলে ঐ পরিবারটি খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে। মাদুস রানার চাকুরি হলে ঐ ওয়ার্ডটি সুরক্ষিত থাকবে বলে আমার বিশ^াস।