জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়াও কিছু গাছ স্থানীয় বনদস্যুরা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ঝুঁকি বাড়ছে। বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের দাবি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্ফীত জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে বালু জমা হয়ে গাছের শিকড় আটকে যাওয়ায় এসব গাছ মারা যাচ্ছে। বন বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মরা গাছগুলো। মরা গাছগুলোর বেশির ভাগই কেওড়া ও গেওয়া।
এভাবে বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কেওড়া গাছ মারা যায়। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সৈকতের কোল ঘেঁষে রয়েছে বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এক সময় এখানকার দৃষ্টিনন্দন নারিকেল বাগান, তালবাগান ও ঝাউবাগান পর্যটকদের আকৃষ্ট করত। কিন্তু নারকেল বাগান ও তাল বাগান সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ২০০৭ সালের সিডরের পর থেকে গত ১৭ বছরে ভাঙনে প্রায় দুই হাজার একর বনাঞ্চল সাগরে হারিয়ে গেছে। দু‘লক্ষাধিক গাছ উজাড় হয়েছে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালী বন বিভাগ। পটুয়াখালী বন বিভাগ ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতি, লতাচাপলী, খাজুরা ও ফাতরার বন এলাকায় ১৩ হাজার ৯৮৪ হেক্টর বনের মধ্যে কুয়াকাটা সৈকতের পূর্ব পাশে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকোপার্ক গড়ে তোলে। এ পার্কে স্থাপন করা হয় পিকনিক শেড, দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজ, কালভার্ট, মাটির রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে আইলা, মহাসেন, আম্পানসহ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে এ পার্কের অসংখ্য গাছ বিলীণ হয়েছে। সৈকতের কয়েক কিলোমিটার বেলাভূমি জুড়ে ছড়িয়ে আছে গাছপালা ধ্বংসের চিহ্ন। গঙ্গামতি এলাকার জেলে আবুল হোসেন জানান, ‘সৈকতের গাছগুলো বিভিন্ন সময় ঝড়-বন্যায় আমাদের জান-মাল রক্ষা করেছে। ঘুর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই এই গাছগুলো মারা যেতে শুরু করে। আগের চেয়ে জোয়ারের পানিও বেড়েছে। গাছের সংখ্যা কমতে থাকায় আমাদের দুর্যোগ ঝুঁকি বাড়ছে।’ অপর এলাকাবাসি ইউনুস গাজী বলেন, সাগরের ঢেউয়ের কারনে বেশিরভাগ গাছ মরে যায়। অঅবার এব শ্রেনীর লোকজন গাছ কেটে নেয়। আবার কেউ কেউ গাছে আগুন লাগিয়ে পরে জ্বালানীর জন্য কেটে নেয়। বরগুনার আমতলী থেকে আগত স্থানীয় পর্যটক জাকির হোসেন জানান, এ অঞ্চলের মানুষদের দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষায় এ বনাঞ্চলটি যথাযথভাবে সংরক্ষন করা দরকার। এ বনাঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে। কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিশেনের সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার জানান, ইকোপার্কসহ সাগর তীরে ব্যাপক এলাকায় বনভূমি কুয়াকাটার সৌন্দর্য বহু গুণে বাড়িয়েছিল। কিন্তু, অব্যাহত ভাঙনে এসব বনভূমি সাগরে বিলীন হওয়ায় সৈকতটি ক্রমশ সৌন্দর্য হারাচ্ছে।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শুধু গঙ্গামতি এলাকায় সাগরের কোল ঘেঁষে ২০০৮-০৯ সালে প্রায় ১০ হাজার আকাশমণি গাছ সৃজন করা হলেও জলোচ্ছ্বাসের সময় চলে আসা বালুতে গাছের শ্বাসমূল ঢাকা পড়লে, কিছু গাছ মরে যায়। স্থানীয় একটি চক্র এ সব মরা গাছসহ বাগান থেকে বিনা বাধায় গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করে। গত ২ বছরে গঙ্গামতি এলাকায় গাছ কাটার ঘটনায় ২৫টির মতো মামলা করা হয়েছে এবং মামলাগুলো চলমান আছে। পটুয়াখালী বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে একসময় তিন হাজার ৩৮৭ একর বনভূমি থাকলেও, এখন মাত্র এক হাজার ৩০০ একর বনভূমি অবশিষ্ট আছে।্#৩৯; ্#৩৯;বাকি প্রায় দুই হাজার একর সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, কয়েক বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কেওড়াগাছসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন জাতের গাছ হারিয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এর প্রধান কারন। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, বালু জমাট হওয়া থেকেই মূলত গাছগুলো মারা যাচ্ছে। তবে কুয়াকাটায় ব্যাপক বনায়নের জন্য ‘সুফল” নামে একটি নতুন প্রকল্প খুব শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। এর আওতায় এখানে ব্যাপক বনায়ন করা হবে।