বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল ॥ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা। বুকফাটা কান্নায় মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়ছেন। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কোনো সান্ত্বনাই তাঁর কান্না থামাতে পারছে না। ছেলেকে হারিয়ে অসহায় শিক্ষক পরিবারটির বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বনই রইল না।
দশমিনায় এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় প্রধান শিক্ষক তন্ময় চক্রবর্তীকে অপমান করেন ও পরীক্ষা দিতে বাধা দেন। এতে কষ্টে, ক্ষোভে তন্ময় আত্মহত্যা করে।
তন্ময়ের মামাতো বোন লাবণী চক্রবর্তী জানান, স্ত্রী জয়ন্তী, মেয়ে দোলা চক্রবর্তী ও ছেলে তন্ময়কে রেখে ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আরজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক গোপাল চক্রবর্তী মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারটি অভাব-অনটনে খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটায়। মেয়ে দোলা বরিশাল মহিলা কলেজের কেমিস্ট্রি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আর ছেলে তন্ময় আরজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি না থাকায় আত্মীয়স্বজনের সাহায্য ও সহযোগিতায় চলত তাদের সংসার। এ ছাড়া গোপাল চক্রবর্তীর ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ধারদেনা হয় পরিবারটির। আরজবেগী বাজারে তিন শতক জমির ওপর একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘর ছাড়া পরিবারটির আর কোনো অবলম্বন নেই।
তন্ময়ের মা জয়ন্তী চক্রবর্তী ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, অভাব-অনটনের সংসারে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে সংসারের হাল ধরার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। নির্বাচনী পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে না পারায় সোমবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তন্ময়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাওসার আলমের গালমন্দে ক্ষোভে-অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে সে।
তন্ময়ের মৃত্যুতে শিক্ষক পরিবারটির সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবিতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদকারীরা প্রধান শিক্ষকের কঠোর বিচার দাবি করেন। তন্ময়ের সহপাঠী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া আক্তার, মাইশা আক্তার ও মাহিমা রহমান জানায়, তন্ময় অনেক ভালো ছেলে ছিল। সে এখন বেঁচে নেই– এটা তারা ভাবতেই পারছে না। তন্ময়ের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে মঙ্গলবার তারা কেউ ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। তারা এ ঘটনার তদন্ত, সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।
আরজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক কাওসার আলমকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পরেশ চন্দ্র শীল জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীর এক বছরের বেতন ১ হাজার ৮০০ টাকা, অন্যান্য চার্জ ৫০০, বকেয়া অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ফি ৮০০ এবং নির্বাচনী পরীক্ষার ফি ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকের ছেলে হিসেবে তন্ময়ের কাছ থেকে টাকাপয়সা নেওয়া হতো না।
দশমিনা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, এ ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম মিয়া জানান, বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।