• ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

উন্নয়নবঞ্চিত ও মাদকে সায়লাব নগরীর ২নং ওয়ার্ড,জন দূর্ভোগ চরমে!

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ১৬:৩৭ অপরাহ্ণ
উন্নয়নবঞ্চিত ও মাদকে সায়লাব নগরীর ২নং ওয়ার্ড,জন দূর্ভোগ চরমে!

রুপন কর অজিত : সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি বরিশাল নগরীর ২নং ওয়ার্ডে। সড়কের বেহাল দশা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মাদক ব্যবসাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই ওয়ার্ডটি।

সূত্র জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এই ওয়ার্ডে, এতে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। আর ওয়ার্ডের প্রায় সকল সড়কই ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। এসব ভাঙ্গা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দূর্ভোগ নিয়ে ওয়ার্ডবাসী চলাচল করলেও দেখার যেন কেউ নেই। জানাযায়, গত বছর বিদায়ী মেয়র এই ওয়ার্ডের দুটি রাস্তা নির্মাণ করেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কিছু দিনের  মধ্যেই রাস্তার পলেস্তারা উঠে যায়। এমনকি ড্রেনের স্লাপও ভেঙ্গে যায়।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় বৃষ্টির পানিতে পানিবন্দি থাকতে হয় এ কাদের চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, অল্প বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় বাচ্চাদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয় ফলে বাচ্চাদের পাঠদানে বিঘ্নঘটে।

শুধু ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নেই নয়, সরকারি বিভিন্ন ভাতা থেকেও বঞ্চিত এ ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। প্রকৃতপক্ষে যাদের সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার কথা তারা না পেয়ে পাচ্ছে বৃত্তশালীরা। দায়িত্বশীলদের স্বজনপ্রীতির কারনে এক ঘরে পেয়েছে টিসিবির একাধিক কার্ড বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।

ওয়ার্ড ঘুরে জানাযায়, গত একমাসেরও অধিক সময় ধরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ সংশোধনী বন্ধ রয়েছে ওয়ার্ডটিতে। ফলে প্রতিনিয়ত নানামুখি সমস্যায় পড়ছেন এলাকাবাসীরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশের ভিসার আবেদন, চাকরীতে আবেদনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ত্রুটি সংশোধন সহ বাচ্চার স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মনিবন্ধন না করতে পারায় ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকাবাসী ।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মাসুমা আক্তার বলেন, নগর ভবনের প্রশাসনিক শাখা থেকে বার বার তাগিদ দেয়াও হয়েছে কাউন্সিল অফিসে। দ্রুত পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চালুর নির্দেশও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এবিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে যোগাযোগ করলে জানানো হয় সিটি করপোরেশন দিয়ে তাদের সচিব না দেয়ার ফলে জনসাধারন এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে এই ওয়ার্ডটিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোঁখ ফাঁকি দিয়ে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কমিশনার গলিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এবিষয়ে কাউনিয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আসাদুজ্জামান জানান, ঐ ওয়ার্ডে মাদকের বেশ কয়েকটি স্পট ও চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। আমারা বেশ কয়েকবার অভিযান চালাই এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করি।

এসময় তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য জিরো টলারেন্স ও কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আমাদের টিম সর্বক্ষন পর্যবেক্ষণ করছে। যেসকল মাদক ব্যবসায়ী পূনরায় মাদক ব্যবসা শুরু করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক নির্মূলে তাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিগত দিনে ওয়ার্ডের উন্নয়নে নানা মূখী বাধার কথা জানিয়ে বিদায়ী কাউন্সিলর একেএম মর্তুজা আবেদিন বলেন, রাজনৈতিক ও ক্ষমতাশীলদের প্রভাবের কারনে ইচ্ছা থাকা সত্তেও উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাশীলরা প্রভাব বিস্তার করে ওয়ার্ডে নানা উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, কাউন্সিলরের কাজ ডিমান্ড প্লেজ করা কার্যকর করার দায়িত্ব মেয়রের। গত পাঁচ বছরে অনেক বার সমস্যার বিষয় লিখে অবগত করলেও তার সমাধান দেয়নি সাবেক মেয়র। এছাড়া ২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত বিসিসির সকল কাউন্সির সন্মানি ভাতা পেলেও তাকে সন্মানিভাতা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ডে ড্রেনের আউটফল খারাপ। এছাড়া নদীর নব্যতা খারাপ হওয়া কারনে পানি নামতে পারে না। তাই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

তিনি আরো বলেন, ২৮ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কমিশনার থাকাকালীন সময় ওয়ার্ডেবাসীর সুখে-দুখে পাশে ছিলাম। ওয়ার্ডবাসীর সুবিধার্থে ১৪ বছর পূর্বে নিজ অর্থায়নে একটি রাস্তা তৈরি করি যা এখনও আগের মত রয়েছে। যতটুকু পেরেছি এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। করনাকালীন সময় ব্যক্তগত তহবিল থেকে ত্রান দেয়া সহ আর্থিক সাহায্য সহযোগীতার কথাও জানান তিনি।

এসকল বিষয়ে নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. মুন্না হাওলাদার বলেন, মাদকের বিষয় সব সময়ই আমার কাছে জিরো টলারেন্স। আমি নির্বাচিত হওয়ার পরে মাদকের বিষয় থানায় অভিযোগ দেই কিন্তু থানা থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিষয় তিনি বলেন,আমার ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশন থেকে সচিব দেয়া হয়নি। গত এক সপ্তাহ আগে একজন পাঠিয়েছিলো পরবর্তীদিনই সে আমাকে দায়িত্ব না বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।

এসময় তিনি আরো বলেন,সদ্য দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে জন্য কাজ করতেছি যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া টিসিবির কার্ডে অনিয়মের বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলেও জনান তিনি।