• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

উত্তর জনপদে মাদক সম্রাট বুলেটের একক সাম্রাজ্য !

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৮, ২০২১, ১৯:৫৬ অপরাহ্ণ
উত্তর জনপদে মাদক সম্রাট বুলেটের একক সাম্রাজ্য !

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার উত্তর জনপদে চলছে মাদকের রমরমা বানিজ্য। যার নেতৃত্বে রয়েছেন শহরতলির চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মাদক সম্রাট বুলেট খান। যার নেতৃত্বে গোটা চরবাড়িয়া ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতি মাদকের বিষ।

দিনের পর দিন প্রকাশ্যে মাদকের সিন্ডিকেট বৃহৎ আকার ধারণ করলেও তার লাগাম টেনে দিতে পারছে না প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা তোতা মিয়ার ছেলে এবং শাহীন খানের ভাই হওয়ার দাপটে এলাকায় বীর দর্পে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে বুলেট খান।

 

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ‘নগরীর উত্তর জনপদের মাদক সাম্রাজের অন্যতম হোতা বুলেট খান। নগরীর কাউনিয়া পিছন স্কুল এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস তার। নিজ ভাড়া বাসায় বসেই মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন তিনি। বুলেটের নেতৃত্বে রয়েছে ৫-৭ জনের বিশ্বস্থ প্রতিনিধি। যাঁদের মাধ্যমে শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায়ে পৌঁছে দিচ্ছেন মাদকের চালান।

 

সূত্র জানায়, ‘বুলেটের মাদক ব্যবসার সহযোগি হিসেবে রয়েছেন একজন আইনজীবী এবং বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের একজন শিক্ষক। বুলেটের নেতৃত্বে তারা দেশের সীমান্ত এলাকা যশোর এবং বেনাপোল থেকে ফেন্সিডিল এবং ইয়াবার চালান সরবরাহ করেন। তার মাদকের চালন আসে মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কারে।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানাগেছে, ‘করোনা মাহামারির মধ্যে ফেন্সিডিলের চালান আনতে বেনাপোল যান বুলেট ও তার সহযোগিরা। সেখান থেকে ফেন্সিডিল নিয়ে ফেরার পথে বিজিবি’র হাতে ফেন্সিডিল নিয়ে ধরা পড়ে বুলেটের সহযোগী বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের একজন শিক্ষক। তবে চতুর বুলেট ও অপর এক আইনজীবী প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে পালিয়ে যায়।

 

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘ফেন্সিডিলসহ আটকের পরে মডেল স্কুলের ওই শিক্ষক জিজ্ঞাসাবাদে জব্দকৃত ফেন্সিডিলের চালান বুলেটের বলে দাবি করে। ফলে ওই ঘটনায় মডেল স্কুলের ওই শিক্ষক এবং বুলেট ও তাদের সহযোগী এক আইনজীবী’র বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

 

প্রশাসনের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘২০১৮ সালে সদর উপজেলার চরমোনাই থেকে নান্টু নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পরে তার কাছ থেকে ২৬ হাজার পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন।

পরবর্তীতে তার স্বীকারক্তি অনুযায়ী বেরিয়ে আসে মাদক ব্যবসার মূল হোতা সজল খান ও বুলেট খানের নাম।

পরে সজলের বাসায় তল্লাশী করে পুলিশ উদ্ধার করে আরও ১৪ হাজার পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির নগড় পাঁচ লক্ষ টাকা। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় সজল। এই ঘটনায় নান্টু ও সজলসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তবে চৌকস বুলেট রহস্যজনক কারণে ওই মামলা থেকে পার পেয়ে যায়।

 

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘কিছু দিন পূর্বে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির লিখন নামের এক আইনজীবীর চেম্বার থেকে মাদক দ্রব্য ফেন্সিডিল উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তবে সেখান থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। সূত্রের দাবি আইনজীবীর চেম্বার থেকে উদ্ধারকৃত ওই ফেন্সিডিল সরবরাহকারী হিসেবে বুলেট খানের নাম শোনা যাচ্ছে। এমনকি মাদক উদ্ধারের পূর্বে বুলেটে আইনজীবীর ওই কার্যালয়ের সামনে তাকে একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বলেও দাবি সূত্রগুলোর।

 

সূত্র জানিয়েছে, ‘মাদক কারবারি বুলেটের বিরুদ্ধে মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে মাদকসহ বেশ কয়েকবার আটকও হয়েছে। তবে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে খুব অল্পতেই জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। এর পর পরই ফের শুরু হয় বুলেটের মাদেক বানিজ্য। শুধু মাদক ব্যবসা নয়, বুলেটের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের নেতৃত্বে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ট্রলারে নিয়ে আসা গরু রাতের আঁধারে চরবাড়িয়ার বিভিন্ন চরে নামিয়ে রাখে বুলেটের চোর চক্রের সদস্যরা। পরে চোরাই গরু সায়েস্তাবাদ, চরবাড়িয়া এবং কাউনিয়াসহ বিভিন্ন বাজারের কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ বুলেটের বিরুদ্ধে।

 

এতো কিছুর পরেও মাদক সাম্রাজের গড ফাদার বুলেট কিভাবে বীরদর্পে ঘুরে ফেরেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। তার ক্ষমতার উৎস কি তা নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছে বাবা এবং ভাই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় মাদক সাম্রাজের খল নায়ক বুলেট খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের এ রহস্যজনক নিরবতার কারণে চরবাড়িয়াসহ শহরতলির উত্তর জনপদের খেটে খাওয়া মানুষ, ছাত্র ও যুবসমাজে মাদকের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বুলেট নামক মাদকের বিষদাত ভেঙে দিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।