রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ পুলিশ প্রশাসন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা করতে সকল শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন মরণকামড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তবে সেনা বাহিনী মোতায়েন হলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বদলাবে বলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। গতকাল শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতীক। তাদের প্রতি জনগণের একটি ভরসা আছে। তাদের মোতায়েন করা হলে সন্ত্রাসীরা জ্বাল ভোট দিতে পারবে না এবং রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে পারবেন না- এটা জনগনের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটুকু সেনা বাহিনীর সদস্যরা রক্ষা করতে পারবেন এটা জেনেই দলমত নির্বিশেষ বিরোধী দল বার বার সোচ্চার কন্ঠে বলে আসছিলো। কিন্তু সরকার নানা টানবাহানা করে এখনো পর্যন্ত তাদের মোতায়েন করেনি। এখন বলছেন ২৪ তারিখে নামাবেন। আমার বিশ্বাস যদি সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয় জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে তাতে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সহ দফতর সম্পাদক মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টুইটারে অপপ্রচার চালানো বেশ কিছু ওয়েব পেজ বন্ধ করা হয়েছে এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমি এর আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একজন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি এটা তত্ত্বাবধায়ন করতেন। ভুয়া ওয়েব সাইট পেজ এবং ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ চালু করে বিএনপির একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাদের নানা ধরে বক্তব্যকে কাটপিস করে তারা এসব ছেড়েছেন। নিশ্চয় আপনারা দেখেছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নানাভাবে অপপ্রচার চালানো। সহজ-সরল পথ অবলম্বন করার সাহস আওয়ামী লীগের নেই। এই কারণেই এসব রোধে আমরা বার বার সেনা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলে আসছি। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থেই নির্বাচন একতরফা করতে সকল শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন মরণকামড় দিচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের চালুনী দিয়ে ছেঁকে তুলছে। সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেয়া হচ্ছে তাদেরকে ধরার জন্য। নেতাকর্মীদেরকে না পেয়ে মহিলা সদস্যসহ পরিবারের লোকজনদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়া হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীকে না পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি- গতকাল শনিবার থেকে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশনের মাত্রা বৃদ্ধি করা হবে। এক্ষেত্রে বিজিবি ও র্যাবকে বিএনপি নেতাকর্মীদের লিষ্ট সরবরাহ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা স্থানীয় থানায় ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে, সেই তালিকাগুলোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন বিজিবি ও র্যাবের কাছে সরবরাহ করছে। সরবরাহকৃত তালিকা ধরে ধরে আজ রাত থেকেই নাকি নেতাকর্মীদের আটক করা হবে। রিজভী বলেন, ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট হিসেবে যাদেরকে মনোনীত করা হবে তাদের নির্বাচনের দু একদিন আগেই গ্রেফতার করা শুরু হবে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে আরো জেনেছি-ডিএমপি থানার ওসিরা সীল মারার জন্য প্রাপ্ত তালিকাভুক্ত আওয়ামী কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত যুবক বয়সের কর্মীরা সীল মারার দায়িত্বে থাকবেন। ৫ জন করে কেন্দ্র ভিত্তিক সীল মারা গ্র“প ঠিক করা হয়েছে। শুধু দলনেতার কাছে মোবাইল থাকবে এবং ২৯ তারিখ রাতে নির্দিষ্ট নাম্বার ব্যতীত অন্য কোন কল রিসিভ করবে না। থানা থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই এর নেতৃত্বে থাকবে এবং রাতে ৩০% ভোট সীল মারা হলে তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাবে। রাত ও দিনের বেলা কেন্দ্রের বাহিরে পাহারা দেয়ার জন্য কর্মীদের দ্বারা পৃথক টিম গঠন করে দিয়েছে পুলিশ। সীল মারার সময় বাহিরে সতর্ক অবস্থায় থাকবে বিভিন্ন বাহিনী। দিনের বেলায় আওয়ামী অন্য কর্মীরা লাইনে থাকবে, বার বার বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আবার ঠিক করা হবে এবং ভোট প্রদানের গতি অনেক মন্থর করা হবে। পুলিশের মোবাইল টিম কর্তৃক বিরোধী দলের সমর্থিত এলাকার লোকদের আসার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করবে। ডিএমপির উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা অধীনস্থ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে বলেন, যারা সরকারকে বিজয়ী করতে চান, তারা হাত তুলুন-এভাবে প্রতিগ্র“তি আদায় করা হচ্ছে অধঃস্তন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় যে বলেছিল আওয়ামী লীগ ২২০ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, সেটার বাস্তবায়নের জন্যেই মাস্টারপ্ল্যান করে বিএনপির প্রার্থীতা বাতিল ও স্বয়ং এমপি প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং জামায়াতের নেতা বলে আরো ২২/২৩ টি আসনের প্রার্থীতা বাতিল করার পরিকল্পনা চলছে। ইসি কর্তৃক তালিকা চূড়ান্ত করার পর প্রার্থীতা বাতিল চরম প্রতারণামূলক। এর দায় ইসিকেই নিতে হবে। মোট কথা ২৭/২৮ তারিখের মধ্যে এ পদ্ধতিতে বেশ কিছু আসনের জয় তারা নিশ্চিত করতে চায়। অথচ নৌকা মার্কার প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুক ঋণখেলাপী হয়েও প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশন ও আদালত এক্ষেত্রে নির্বিকার। ফারুক নিজেই বলেছেন- তার ৩৬ কোটি টাকার লোন রিসিডিউলিং আবেদন কেনো গ্রহণ করা হয়নি তা তিনি জানেন না, তাহলে তিনি বৈধ প্রার্থী হলেন কিভাবে? নৌকা মার্কার আরেক প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি সরকারী বেতনভুক্ত, অথচ তিনিও বৈধ প্রার্থী। অসংখ্য দন্ডিত ও ঋণখেলাপিরা নৌকা মার্কার প্রার্থী। আসলে ক্ষমতা হাতে থাকলে পাহাড়েও নৌকা ভাসানো যায়। রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রার্থী চূড়ান্ত করে দেয়ার পর এখন আদালতকে চাপ দিয়ে প্রার্থীতা বাতিলের দায় ইসির উপরই পড়ে। মার্কা পাওয়ার পর নির্বাচনী মাঠ থেকে প্রার্থীদের সরিয়ে দেয়া সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। বাংলাদেশে এধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। নওগাঁ, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঢাকা, বগুড়া, লক্ষীপুর, নরসিংদী, মৌলভীবাজার, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, জামালপুর, মাগুরা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, যশোর, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা, নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও তাদের গ্রেফতারের নানা ঘটনা তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২৫৮টি। এজহারে জ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৬৩ জন, অজ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮৮৩ জন, গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৭৫ জন এবং হত্যার সংখ্যা ৪জনকে।