এম.এস.আই লিমন ॥ অবশেষে বহুল আলোচিত বাতিল হওয়া বিসিসি’র ১২১ কর্মচারীর নিয়োগের ৫৮ কর্মচারীর স্থায়ী স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মন্ত্রনালয়ের রুলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছানোর আগ পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশে তাদের জাতীয় প্রে-স্কেলের বেতন প্রদান বহাল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিসিসিকে। বিসিসি সূত্রে, গত ২০০২ সালে বিএনপি দলীয় এ্যাড.মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনরায়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহনের পরে তার পরিষদের মেয়াদকালীন সময়কার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মাষ্টাররোলে ৫৮ জন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে আরো ৬৩ জন কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেছিল।মেয়রের ক্ষমতার শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতামলের সময়ে নিয়োগকৃতদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যাতী রেখে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ প্রদান করার এমন অভিযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিভাগে করা হলে তাদের তদন্ত টিম বরিশালে এসে তদন্ত সাপেক্ষে ১১৯ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি এই মর্মে তাদের নিয়োগপত্র বাতিল করা সহ চাকুরীচ্যুত করার নির্দেশনা দেয় বিসিসি কতৃপক্ষকে। এর প্রেক্ষিতে নিয়োগ ফিরে পেতে গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতের দারস্ত হয়ে মন্ত্রনালয়ের নিয়োগ বাতীল ও চাকুরীচ্যুতর করায় মামলা দায়ের করা হলে মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করে। এরপরে ২০১১সালে উচ্চ আদালতের বিচারকগনেরা মানবিক দিক বিবেচনা করে চাকুরীচ্যুত নিয়োগ বাতীল হওয়া ১১৯ কর্মচারীদের পূর্নবহাল করে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা বাতিল করার রায় দিয়ে তাদের যোগদান নেবার আদেশ দেয় কতৃপক্ষকে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে। পরিবারের পেটের ক্ষুধা মেটাতে চাকুরীচ্যুতরা তাদের সর্বস্ব জমি ভিটা বেচা বিক্রি করে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে রায় তাদের অনুকুলে আসলেও তৎকালীন সময়কার বিসিসি’র নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন উচ্চ আদালতের রায় কে সম্মান না দেখিয়ে রায় অনুযায়ী যোগদান নেননি। ফলে রায় পাওয়ার পরেও প্রয়াত মেয়রের কাছে সকাল বিকাল ধরনা ধরে যোগদান নেবার কাকতি মিনতি জানায় তার পরিষদের শেষ সময় পর্যন্ত। মেয়র মুখে যোগদান নেবার আশ্বাসে আশ্বস্ত করে রাখলেও তার আমলে যোগদান নেয়া হয়নি। এরপরে ২০১৩ সালের অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বরিশালে জাতীয়তাবাদী বিএনপি দলীয় আহসান হাবীব কামাল জনরায়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পিছনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড.মজিবর রহমান সরোয়ারের অবদান থাকায় তার আমলের নিয়োগকৃতদের মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পূর্ব মূহুর্তে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্যানেল মেয়র ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদার উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে চাকুরীচ্যুতদের পূনর্বহাল করে। এদিকে অর্গানমে মাষ্টার রোলের কর্মচারীদের পর্যায় ক্রমে নিয়ম অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে আত্ত্বীয় করনের কথা থাকলেও বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। এরপরে গত ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিলে বিসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চলতি দায়িত্বরত প্রধান প্রকৌশলী খাঁন মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম তৎকালীন মেয়র এ্যাড.মজিবর রহমান সরোয়ারের মাষ্টার রোলে নিয়োগকৃত ৫৮ কর্মচারীকে জাতীয় পে-স্কেলের বেতনের অন্তর্ভুক্ত করে। তাছাড়া তিনি দায়িত্বরত সময়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সামান্যতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও গোপন সক্ষতায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ বিসিসিতে না থাকা সত্ত্বেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাজে দায়িত্ব প্রদান করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব দেয় তিনি। যার কারনে প্রতিটা সরকারি বেসরকারি দপ্তর সহ জন সাধারনদের কাছেও টেকশই উন্নত শহর বরিশালকে দেখার স্বপ্ন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে এহেন কর্মকান্ডের ফলে নগর সেবা প্রদানের প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের কারনে। এ ছাড়াও একই বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মতার দায়িত্বে থাকা সময়ে তিনি অনেক নিয়মবহির্ভূত ভাবে কর্মকান্ড করায় নানান ভাবে বিতর্কীত হয়ে আসছে আজো বিসিসি’র বরিশাল সিটি কর্পোরেশন৷ তার এহেন কর্মকান্ডের কারনে ব্যক্তি লাভবান হলেও ব্যাপক ভাবেই ক্ষতি সাধিত হয়ে আসছে ভূক্তভোগী জনসাধারণদের বলেও অভিযোগ নগরবাসী সহ খোদ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য যোগ্য পদ বঞ্চিত কর্মচারীদের। এদিকে এরপরেই জাতীয় পে-স্কেলে বেতন বন্ধ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই নির্দেশনার আদেশ আসলে এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে রিটপিটিশন দাখিল করে ৫৮ কর্মচারীরা আইনজীবীর মাধ্যমে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বিষয়টি আমলে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিসিসি/প্রঃব্যঃনথি -০৭/১৪-৮৯০(৫) স্মারক নং এ ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবরের অফিস আদেশে জাতীয় পে-স্কেলে বেতন ৫৮ কর্মচারীর বন্ধ করার নির্দেশনাকে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। এর ধারাবাহিকতায় পেটের ক্ষুধা আর পরিবারের মূখে সামান্য হাসি ফোটানোর জন্য নগরসেবার কাজের পারিশ্রমিকের অর্থ ব্যয় করে মাসের পর বছর পার করে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না করার আইনি লড়াইয়ে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ন চূড়ান্ত ভাবে সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছরের গত ১২ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তাদের জাতীয় পে-স্কেলের বেতনের অন্তর্ভূক্ত করনের বিপরীতে অফিস আদেশ বাতিল করার স্মারক নং এর অফিস আদেশ টি সম্পুর্ন বাতিল করে তাদের জাতীয় পে-স্কেলের বেতনের স্থায়ী ভাবে অন্তভূর্ক্ত করনের রায় দেয় বিচারক। ঢাকা সুপ্রিম কোর্টে তাদের পক্ষের আইনজীবী এ্যাড.ব্যারিষ্টার আতিকুর রহমান চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর ‘ আর’ ৬২৫ নং ডাক যোগে পাঠানো হলে বিসিসি’র আইন সহকারী মনির গত ১৮ নভেম্বর মেয়রের পক্ষে সাক্ষর করে গ্রহন করে প্রশাসনিক দপ্তরে নথী ভূক্ত করে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে বলেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতীয় পে-স্কেলের বেতনের অন্তর্ভূক্ত করনের পরে তা বাতিল করার আদেশ টি স্থায়ীভাবে স্থগিতাদেশ দেয়ায় বিসিসি’র বহুল আলোচিত ১২১ কর্মচারী রয়েছে সেইভ জোনে বলেও নিশ্চিত সকলে বলে জানায়।