বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল ॥ বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ১০ শিক্ষার্থীকে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বরখাস্ত) করা হয়েছে। তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধী ফাঁসির দ-প্রাপ্ত কাদের মোল্লার ভাগনে অধ্যক্ষ কারসাজি করে এই স্ট্যান্ড রিলিজ করিয়েছেন। খামারবাড়ি বলছে, উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যে কারণে আন্দোলন করেছে, সেই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি খামারবাড়ি। তদন্ত কমিটি বলছে, শিক্ষার্থীদের বদলির জন্য তারা কোনো সুপারিশ করেননি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে সোমবার এ আদেশ দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা চিঠি হাতে পায় বৃহস্পতিবার।
চিঠিতে ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে স্ট্যান্ড রিলিজকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো লেখা হয়। ২৪ নভেম্বর বর্তমান প্রতিষ্ঠান থেকে অবমুক্ত হয়ে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে বদলির প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
বদলি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিয়াম সরদার রংপুরে, আরিফুল ইসলাম গাইবান্ধায়, মো. ইব্রাহিম ঝিনাইদহে, জাহিদ হাসান অন্তিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, জাবেদুর রহমান মাহি সিলেটে, তাসনিম জাহান শেহতাজ কুমিল্লা, নাজমুল হাসান ঝিনাইদহে, মারিয়া তুন ইভাকে শেরপুরে, মোজাম্মেল হককে গাজীপুর ও সজীব মিস্ত্রিকে রাঙ্গামাটিতে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী সিয়াম সরদার বলেন, ‘রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলাম আমরা। একপর্যায়ে খামারবাড়ির কর্মকর্তারা, ইউএনও এসে আমাদের আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করি। এরপর অধ্যক্ষের অনিয়ম তদন্তে ৮ নভেম্বর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার।
‘তবে হঠাৎ করে আমরা যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি তাদের বদলি করা হয়েছে অনৈতিকভাবে। কিন্তু যার অনিয়ম তদন্তে কমিটি করা হয়েছে, সেই দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহাল তবিয়তে রয়েছে। ২১ তারিখ চিঠি সাইন হলেও আমরা জানতে পেরেছি ২৪ তারিখ। আবার ২৬ তারিখের মধ্যে ইনস্টিটিউটে যোগ দিতে বলা হয়েছে। কাদের মোল্লার ভাগনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এসব করিয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তাদের শায়েস্তা করা হচ্ছে। আমাদের ১০ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছে অনেকে। ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ওদের স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়েছে। এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মকবুল আহম্মেদ বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলতে পারব না। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই অনুযায়ী ওদের বদলি করা হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বদলিজনিত কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। ডিজি মহোদয়ের অফিস এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।’
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, তদন্ত কমিটি গঠনকারী ও তদন্ত কমিটির সদস্য মোসাম্মৎ মরিয়ম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বদলির বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি, কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুধু যে ওদের বদলি করা হয়েছে বিষয়টি তেমন নয়, দুজন উপসহকারী পরিচালককেও বদলি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।